প্রতিনিধি নড়াইল
![]() |
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুরে প্রতিপক্ষের হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের পর এক নারীর বাড়ির দৃশ্য এটি। গতকার শুক্রবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘আগে অল্প কিছু ভাঙিছেল। কালকে রাত্রি তালা ভাঙে সবকিছু নিয়ে গেছে। ঘরে আর কোনো জিনিস নেই। পানি খাওয়ার কলডাও (নলকূপ) খুলে নিয়ে গেছে। ঘরে থাকা কয়ডা চাল, থালবাটিও নিয়ে গেছে। যা করিছে, তা মাইনষির সাথে মাইনষি করে না।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা–হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বৃদ্ধা রাশেদা বেগম। তাঁর অভিযোগ, প্রতিপক্ষ স্থানীয় মিলনপক্ষের লোকজন গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে হামলা করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন তিনি কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল কাঞ্চনপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মিলন মোল্যার পক্ষের সঙ্গে পিকুল শেখ ও আফতাব মোল্যার পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পিকুলপক্ষের ফরিদ মোল্যা (৫০) নিহত হন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মিলনদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এরপর আসামিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আফতাবপক্ষের লোকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
পাল্টাপাল্টি মামলার পর গত ২৯ এপ্রিল ফরিদ হত্যা মামলার ১৮ নম্বর আসামি রফিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার হয় প্রতিপক্ষ আফতাবপক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে। পরে রফিকুলকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আফতাবপক্ষের লোকজনকে অভিযুক্ত করে আরেকটি মামলা করা হয়। এরপর আসামিপক্ষের লোকজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে ওঠে প্রতিপক্ষ মিলনের লোকজনের বিরুদ্ধে।
যেসব বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে, তাঁর মধ্যে রাশেদা বেগমের বাড়ি আছে। তাঁর বাড়িতে দুই দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রফিকুলের লাশ উদ্ধারের পর তাঁর বাড়িতে অল্প ভাঙলেও এবার তাঁর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
আফতাবপক্ষের লোকজনের অভিযোগ, রফিকুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আফতাবপক্ষের লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে আফতাবপক্ষের অন্তত ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন মিলনপক্ষের লোকজন। এর মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। এ সময় নলকূপ থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
আফতাবপক্ষের রেবেকা বেগম বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ওরা আমার বুকে ভেলা (দেশি অস্ত্র) ধরে বলিছে বাড়ি থেকে নাম। ভয়ে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছি। এরপর আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করিছে। ঘরে মালমাল যা ছেল, সব নিয়ে গেছে। পুকুরের মাছও ধরে নিয়ে গেছে। টিউবওয়েলও খুলে নিয়ে গেছে, বাথরুমটাও ভেঙে চুরমার করে থুইয়ে গেছে। এখন এই বাড়িতে থাকার কোনো পরিবেশ নেই। পরের বাড়িতে খাচ্ছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করছেন মিলন মোল্যার লোকজন। তাঁদের দাবি, মারামারিতে ফরিদ মারা যাওয়ার পর আফতাবদের লোকজন তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আফতাবপক্ষের একজনের বাড়ির পাশ থেকে তাঁদের একজনের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এরপর আফতাবপক্ষের লোকজন নিজেরাই বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়েছে। তাঁদের কেউ ভাঙচুর বা লুটপাট করেনি। তাঁদের কেউ হুমকিও দিচ্ছে না।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে বলেন, কাঞ্চনপুরের ঘটনাগুলোয় একাধিক মামলা হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে। কোনো অভিযোগ আসলে যাচাইবাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ বর্তমানে ভালো আছে।