নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সরকারের পরিকল্পনার প্রতিবাদে সভা। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে, ২৫ মে ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এই হুঁশিয়ারি দেন। রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে দেশ বাঁচাতে গিয়ে সবাই গণতন্ত্রের প্রশ্নে একমত। আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোন। তিনি সফল মানে তো জুলাই অভ্যুত্থানের সফলতা। আমরা লড়াই করা জাতি। গণতন্ত্র, জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার আগে যেন ঈশ্বর আমার মৃত্যু না দেয়।’ এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার নয়, নির্বাচিত সরকার মিয়ানমারে করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘সবকিছু করার ম্যান্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তাদের কাজ হলো (জুলাই-আগস্টের) গণহত্যার বিচার করা, আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়া, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়া। বন্দর ইজারা দেওয়া, এনবিআর ভাঙা তাদের কাজ নয়।’ দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণারও দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার প্রয়োজন হলে দেশের মেধাবী কর্মকর্তা দিয়ে বন্দর পরিচালনা করতে পারে।’ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপেরও (পথনকশা) দাবি করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও দেশ বাঁচাও, বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, বন্দর নিয়ে দেশের নিরাপত্তা ও জাতির স্বার্থ দেখতে হবে। বন্দরের শুল্কের (ট্যারিফ) বিভিন্ন ভাগ আছে। বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সেই দায়িত্ব দিলে তারা নিজেদের মতো শুল্ক নির্ধারণ করবে। নতুনভাবে এখানে একটা টাকাও বিনিয়োগের সুযোগ নেই। কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর এমনিতেই আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানান আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি সরকারকে বন্দরের বিষয়ে গণশুনানি করারও পরামর্শ দেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘ভবিষ্যতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত না এলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।’
বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।