প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
![]() |
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের পুড়ে যাওয়া কার্যালয়ে টানানো হয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড। আজ বুধবার দুপুরে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আজ বুধবার দুপুরে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ওই কার্যালয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ঠাকুরগাঁও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশের খাস জমিতে কার্যালয় স্থাপন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচনে সরকার গঠনের পর সেখানে তিনতলা কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট স্থানীয় কয়েকজন নেতার বাড়িঘরের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের আসবাব ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই থেকে পোড়া অবস্থাতেই পড়ে ছিল কার্যালয়টি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আজ দুপুরে হঠাৎ একদল যুবক এসে কার্যালয়টিতে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা শ্রমিক নিয়োগ করে কার্যালয়টিতে পড়ে থাকা আসবাবের পোড়া অংশ, ছাই, জানালার ভাঙা কাচ ও ময়লা অপসারণের কাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা কার্যালয়ের দেয়ালে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনতলা ওই ভবনের নিচতলায় দোকানপাট। দোতলার বারান্দার গ্রিলে সাঁটানো হয়েছে পিভিসির সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ‘জুলাই যোদ্ধা, ঠাকুরগাঁও’। ভবনের একপাশে তখনো আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পুড়ে যাওয়া সাইনবোর্ডটি ঝুলছিল। ভবনের ভেতরে চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। তিনতলায় জনা দশেক তরুণ–যুবককে দেখা গেল। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন।
সে সময় নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধার’ আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে রায়হান অপু নামের এক যুবক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি খাস জমিতে অবস্থিত। আওয়ামী লীগ জায়গাটি দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় তৈরি করে। গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কার্যালয়টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন ছাত্র-জনতা। এর পর থেকে ওই কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ এর মধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে।
রায়হান অপু বলেন, ‘আমরা যাঁরা জুলাই-আগস্টের ওই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছি, তাঁদের সংগঠন জুলাই যোদ্ধা এখন থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় ব্যবহার করতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। এখানে একটি যুব ক্লাব গড়ে তোলা হবে। সেই ক্লাবের অধীনে একটি জিমনেসিয়ামও থাকবে। সেখানে এলাকার সব যুবক অংশ নিতে পারবেন।’
হাসান আলী নামের এক যুবক নিজের জুলাই যোদ্ধার স্বাস্থ্য কার্ডটি এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা সবাই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছি। আহত ব্যক্তিদের নিয়ে জুলাই যোদ্ধা সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। আজ থেকে এই ভবনে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হবে। সে জন্য রাতে ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। সেই ভোজে সব সাংবাদিকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। ভোজের মাধ্যমেই আমাদের যাত্রা শুরুর বিষয়টি জানান দেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠাকুরগাঁওয়ের এক আইনজীবী বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি খাস জমিটি বন্দোবস্ত পায়। এখন এই সরকারি জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়াকে দখল বলা যেতেই পারে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও বন্দোবস্ত তো আর বাতিল করা হয়নি। কোনো সংগঠন সেই কার্যালয়ের অবকাঠামো ব্যবহার করতে হলে সরকারের কাছ থেকে বৈধ প্রক্রিয়ায় বন্দোবস্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।