প্রতিনিধি পাবনা
রূপপুর প্রকল্প বন্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মানববন্ধন। আজ বেলা ১১টার দিকে ঈশ্বরদী শহরের ফকিরের বটতলার সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধে ষড়যন্ত্র চলছে—এ অভিযোগ তুলে পাবনার ঈশ্বরদীতে মানববন্ধন ও পথসভা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে শহরের ফকিরের বটতলায় ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে ফজলুর রহমান বলেন, ‘রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সাম্প্রতিক সময়ে দাবি আদায়ের নামে আন্দোলন শুরু করেছেন। এতে প্রকল্প এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, যা শুধু দেশীয় গণমাধ্যমেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘নানা কারণে প্রকল্পের কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেলেও ইতিমধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসেই সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হওয়ার কথা এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এমন সময় প্রকল্প এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করা একটি অশুভ ইঙ্গিত।’
ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে এনপিবিসিএলে প্রায় দুই হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হলেও বিএনপি বা বিরোধী দলের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, যদিও অনেকেই সে সময় যোগ্য ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।’
সভায় বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নজরদারিতে থাকা স্পর্শকাতর এই প্রকল্পে আন্দোলন ও নিরাপত্তা ঝুঁকির ঘটনা শুধু প্রকল্পের অগ্রগতিই নয়, বরং আন্তর্জাতিক লাইসেন্স প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তাঁরা আরও বলেন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পে কাজ করছেন। তাঁরা এসে ঈশ্বরদীতে ইতিবাচক আর্থসামাজিক পরিবর্তন এনেছেন। এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এবং যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তাঁরা।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব, ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আশিকুর রহমান নান্নু, সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস আলমগীর, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ছাত্রদলের সাবেক নেতা রফিকুল ইসলাম নয়ন, যুবদলের আবু সাঈদ লিটন, বিএনপি নেতা শামসুজ্জোহা পিপ্পু, আমিনুর রহমান স্বপন, মনিরুজ্জামান টুটুল, নারী নেত্রী সাথী খাতুন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইব্রাহিম হোসেন।
উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের সূচনা হয় ২৮ এপ্রিল। ৬ মে ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা জানান তারা। পরদিন প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন কর্মরতরা। এরপর এনপিসিবিএল (নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড) আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন মেনে চলার নির্দেশনা পাঠায়। গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটি ১৮ জন প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। একই ধারাবাহিকতায় ১৪ মে আরও ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে এবং প্রকল্প এলাকায় প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুতি ও বরখাস্তের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ ঈশ্বরদী’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর আগে বুধবার দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও প্রচার চালানো হয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে।