প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে | ছবি: ফেসবুকের ভিডিও থেকে কোলাজ |
চট্টগ্রামে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে এক নারীসহ দুজনকে পেছন থেকে এক ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা যায়।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরের জামালখান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যে ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা গেছে, তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী বলছেন ছাত্রজোটের নেতা–কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। তিনি ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত বলছেন তাঁরা। তবে ছাত্রশিবির বলছে, তিনি শিবিরের দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই। শিবিরের কেউ এ কাজে জড়িত নন।
১৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দেখা যায়, হামলার পর প্রেসক্লাবের পাশে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে। ওই ব্যক্তি পুলিশের চোখ এড়িয়ে নেতা-কর্মীদের পেছন যান। সেখানে দাঁড়িয়ে হঠাৎ একজনকে লাথি মারেন তিনি। এরপর ঘুরে আবার আরেক নারীকে লাথি মারেন।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফেসবুকে এ বিষয় নিয়ে সমালোচনা চলছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রজোটের নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা গেছে, তাঁর নাম আকাশ চৌধুরী। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী হিসেবে পরিচিত। অনেকে তাঁকে ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে চেনেন। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এক সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত।
ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা লিখেছেন, ‘ঘটনাটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে হয়েছে। শিক্ষার্থী বোনটির শরীরে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে লাথি মারা ক্যাপ পরিহিত এই শিবির সন্ত্রাসীর নাম আকাশ চৌধুরী। চট্টগ্রামের জামায়াত নেতার অনুসারী সে।’
তবে ঘটনাস্থলে শিবিরের কেউ ছিলেন না বলে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার শিবিরের সভাপতি মো. তানজীর হোসেন ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক। শিবিরের নেতা–কর্মীরা জানিয়েছেন, আকাশ চৌধুরী বর্তমানে শিবিরের দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই। শিবিরের কোনো কর্মী এ ধরনের কাজে জড়িত নন।
জানা গেছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। কর্মসূচি শুরুর পরপর সেখানে মিছিল নিয়ে আসে শাহবাগবিরোধী ঐক্য। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে ১২ জন আহত হন।
এ হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁদের মুক্তির দাবিতে এদিন এশার নামাজের পর কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতা–কর্মীরা। তবে ব্যানারে তাঁদের নাম ইংরেজিতে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ লেখা ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান তাঁরা।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা যেহেতু হয়েছে আমরা ব্যবস্থা নেব।’