প্রতিনিধি রংপুর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ১৬ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগকারী নেতাদের মধ্যে রংপুর মহানগর কমিটির ১১ জন ও জেলা কমিটির ৬ জন রয়েছেন। তাঁরা হলেন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব সিয়াম আহসান (আয়ান), সংগঠক আদনান সামির, মাহদী হাসান (অনিক), গোলাম আযম (রাতুল), এনায়েত রাব্বি, সদস্য আরাফাত সানি (আপন), আল-শামস সিয়াম, আল আমিন, সীমান্ত হোসেন, মোজাহিদ ও আল তানজীল আহসান।
জেলা
কমিটির পদত্যকারী সদস্যরা হলেন মুবতাসিম ফুয়াদ (সাদিদ), জুনাইদ ইসলাম
(সাদিদ), সৃজন সাহ, মাহতাব হোসেন (আবির) ও সাওম মাহমুদ (সিরাজ)। এ সময়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার ঘোষণা দেন অর্ধশতাধিক
কর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর কমিটির পদত্যাগকারী যুগ্ম সদস্যসচিব
সিয়াম আহসান আয়ান বলেন, ‘সম্প্রতি রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক,
সদস্যসচিবসহ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক
কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং এসবের সপক্ষে পাওয়া প্রমাণ আন্দোলনের মূল চেতনা ও
আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই গুটিকয় নেতার অপকর্মের দায় আমরা যাঁরা
নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছি, তাঁদের ওপরও বর্তাচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও
অপমানজনক।’
মাহতাব হোসেন আবিরের অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রংপুরের ঘাঘট নদের পাড়ে গ্রামীণ কুটির শিল্প মেলায় ব্যাপক জুয়ার অভিযোগ ওঠে। সেখান থেকে মহানগর ও জেলা কমিটি মিলে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা নেয়। তখন তাঁরা মহানগর ও জেলার শীর্ষ নেতাদের কাছে কৈফিয়ত দাবি করলেও তাঁরা দেননি। এ ছাড়া মামলা–বাণিজ্য, ফেনীর বন্যার সময় ত্রাণের অবশিষ্ট ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৫ কর্মচারীর নিয়োগে কয়েক লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন তাঁরা।
পদত্যাকারী অন্য নেতারাও প্রায় একই অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, যে মূল্যবোধ ও আদর্শকে ধারণ করে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছিলেন, তা আজ গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের স্পষ্ট অবস্থান, এসব অপকর্মের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা এই অন্যায়ের দায় নিতে বাধ্য নন। এ কারণে পদত্যাগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। পুরো প্লাটফর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।’
মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ বলেন, ‘আমি কোনো অনৈতিক বা দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। অবশ্যই কারও না কারও স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে এমনটি করা হচ্ছে।’
এর আগে ১৫ মে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান পদত্যাগ করেন।
গত ২৪ নভেম্বর রাতে ইমতিয়াজ আহমেদকে আহ্বায়ক ও রহমত আলীকে সদস্যসচিব করে ১১২ সদস্যের মহানগর কমিটি এবং ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক ও আশফাক আহমেদকে (জামিল) সদস্যসচিব করে ১৫৫ সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।