প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
পুকুর ইজারা নিয়ে উত্তেজনার জের ধরে বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেখানে দুটি পোড়া মোটরসাইকেল পড়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী পুঠিয়া রাজবাড়ি বাজার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ছয়টি খাসপুকুর ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গতকাল বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে সামনে রাখা দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন পোড়ানো মোটরসাইকেল দুটি কার্যালয়ের সামনে ওভাবেই পড়ে রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় দুই দিন ধরে উপজেলা সদরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মন্ডল এবং সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন খানের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিরতা চলছে। এর আগেও তাঁদের মধ্যে একাধিক বিবাদের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার পুঠিয়া মডেল স্কুলের ছয়টি পুকুরের খোলা ডাক ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলনকক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আল মামুন খান ও নজরুল ইসলাম মন্ডলের অনুসারীরা ডাকে অংশ নেন। যাঁরা পুকুরের উন্মুক্ত ডাকে অংশ নিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম মন্ডলের অনুসারী ও রাজশাহী জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক রায়হান তাঁদের নিয়ে একটা সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। আল মামুনের অনুসারীরা একমত না হওয়ার কারণে সমঝোতা হয়নি।
ফারুক রায়হান দাবি করেন, মাত্র ৬৫ হাজার টাকার একটি পুকুরে জেদের কারণে তাঁদের পক্ষের একজন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডাক দেন। আল মামুনের চাচাতো ভাই ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ডাক দেন। এখন পুকুরটা তাঁর নামেই বিট হওয়ার কথা। কিন্তু জেদের বশে ডাক দেওয়ার পর তাঁরা নিজেদের লোকজন নিয়ে নিচে নেমে যান। তাঁরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তিনি বলেন, নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে ফোন করেন। সেনাবাহিনী এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ফারুক রায়হান বলেন, সন্ধ্যার পরে মামুনের অনুসারীরা রাজবাড়ি বাজারে অবস্থিত পুঠিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও ছাত্রদলের কার্যালয় ভাঙচুর করেন। কার্যালয়ের সামনে রাখা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন। তাঁরা কার্যালয়ে রাখা শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি, ব্যানার ও চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পোড়া মোটরসাইকেল দুটি কার্যালয়ের সামনেই পড়ে রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাজবাড়ি সড়কের মাথায় সাদা গাড়ি নিয়ে পুলিশ পাহারায় রয়েছে।
এ বিষয়ে মামুন খান বলেন, পুকুর ইজারা দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে। এক পক্ষকে সেনাবাহিনী এসে পিটিয়েছে। তিনি দাবি করেন, ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি পক্ষ তাঁর নামে বদনাম ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’
আল মামুন বলেন, ‘তাঁরা ৫ আগস্টের আগে কোথায় ছিলেন? কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হলো অথচ তারেক রহমানের ছবি পুড়ল না, কেমন সাজানো নাটক এটা বুঝতে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন বলেন, উন্মুক্ত ডাক ছিল। দুই পক্ষই মরিয়া ছিল তারা পুকুর নেবেই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দিয়ে ডেকেই যাচ্ছিল। পরে ক্ষোভে এক পক্ষ নিচে গিয়ে অবস্থান নেয় যেন অন্য পক্ষ ওপর থেকে নামলেই তাদের ওপরে হামলা করবে। পরে সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে ওপরে যারা ছিল তাদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নিচে যারা উপজেলা পরিষদের গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিল তাদের সরাতে গিয়ে হয়তো কয়েকজন লাঠিপেটার শিকার হতে পারে। আর রাজবাড়ি বাজারের ঘটনা পরে রাতে ঘটেছে।
পুঠিয়া থানার ওসি কবীর হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবু পুলিশ টহল রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। পোড়া মোটরসাইকেল তাঁদের কার্যালয়ের সামনেই পড়ে রয়েছে।