নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি কর্মচারীদের মতো একই হারে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ | ফাইল ছবি |
এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রস্তাবটি ঈদুল আজহার আগেই অনুমোদন পেলে এবারের ঈদেই তারা বর্ধিত হারে ভাতা পাবেন।
এতদিন শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পেয়ে আসছিলেন। এই নিয়ম চালু হয়েছিল ২০০৪ সাল থেকে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, শিক্ষকদের উৎসব ভাতা হবে ৫০ শতাংশ ও কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুজহাত ইয়াসমিন বলেন 'মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া প্রস্তাব যথাযথ প্রক্রিয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।'
অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ ফারুক-উজ-জামান বলেন 'প্রস্তাবটি নিয়ে কাজ চলছে, তবে অনুমোদন দেওয়া হবে কি না বা কবে নাগাদ তা হবে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।'
বর্তমানে দেশে সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল ও ২ হাজার ৮০০-এর বেশি কলেজে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। তাদের উৎসব ভাতা বাড়াতে বছরে সরকারের বাড়তি খরচ হবে ৪৮০ কোটি টাকা। একটি ঈদের জন্য খরচ হবে ২৪০ কোটি টাকা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ ও ক্রয় শাখার সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন 'চলতি অর্থবছরের বাজেটে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল। সেখান থেকেই উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই অর্থ বিভাগ এটি অনুমোদন করবে।'
তিনি জানান 'পরবর্তী বাজেটেও এই খাতে ৪৮০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।'
এ উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করেনি। তাদের জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দেশে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার সংখ্যা ৮ হাজার ২২৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষক রয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪০ জন। কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ২২২টি।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখনো উৎসব ভাতা বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা পাননি। ফলে কোনো প্রস্তাবও তৈরি হয়নি।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে এম শফিকুল ইসলাম বলেন 'কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় উৎসব ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও শাখার উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলমও বলেন 'আমরাও কোনো নির্দেশনা পাইনি, তাই কোনো প্রস্তাব তৈরি করিনি।'
স্কুল-কলেজের মতো মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও সব সময় একই হারে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন। কিন্তু এবার উৎসব ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ থেকে বাদ পড়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার বলেন 'স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষকরা সব সময় একই নীতিতে সুবিধা পেয়েছেন। এবার যদি আলাদা করা হয় তাহলে আমাদের আন্দোলনে যেতে হবে। এতে শিক্ষা খাতে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।'
তিনি আরও বলেন 'আমরা চাই সবাই যেন সমান হারে উৎসব ভাতা পান।'
২০০৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওসমানী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য উৎসব ভাতা চালুর ঘোষণা দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান।
তিনি বলেন 'আমরা তখনই শতভাগ উৎসব ভাতার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার তখন বলেছিল বাজেটে টাকা নেই। তাই আংশিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন আবার এক সিকি বাড়ানোর প্রস্তাব হয়েছে। এটা ভালো দিক। তবে আমরা চাই এবার বাজেটে শতভাগ উৎসব ভাতার ব্যবস্থা হোক।'
১২ ফেব্রুয়ারি থেকে 'এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট' ব্যানারে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা।
৫ মার্চ তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন 'এই ঈদ থেকে উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হবে। যদিও আমি এখনই নির্দিষ্ট সংখ্যা বলছি না, তবে বাজেটে এই খাতে সংস্থান রাখা হচ্ছে।'
এই ঘোষণার পরদিন আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষকরা।
জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন 'ভাতা আংশিক বাড়ানো হলেও আমরা তা প্রত্যাখ্যান করব না। তবে আগামী বাজেট থেকেই শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও বিনোদন ভাতা দেওয়ার দাবি থাকবে।'
তিনি আরও বলেন '১৫ মে’র মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আমরা আবার রাজপথে নামব। আমরা চাই ঈদুল আজহার আগেই বর্ধিত ভাতা হাতে পেতে।'