প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
![]() |
মানিকগঞ্জ শহরে প্রতিপক্ষকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে একদল কিশোর। গত ১৩ মে দুপুরে শহরের শহীদ রফিক সড়কে | ছবি: সংগৃহীত |
মানিকগঞ্জে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ দৌরাত্ম্য আবার বাড়ছে। কিশোরেরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে মারামারি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত, মাদক সেবন, বিকট শব্দে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এ ঘটনায় অভিভাবক ও এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন।
সম্প্রতি শহরে দুই দল কিশোরের মধ্যে ধারালো চাপাতি ও চায়নিজ কুড়াল নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোর। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আজ রোববার ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী আরও ১৩ জন কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর ছাত্রলীগের নেতারা বিদ্যালয়ের কিশোরদের নিয়ে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং করতেন। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক প্রভাবে কিশোরদের কেউ কেউ ‘কিশোর গ্যাং’ গড়ে তোলে। তবে ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কয়েক মাস কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়ে যায়। ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ নিয়ে দ্বন্দ্ব, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, প্রেমবিষয়ক ঘটনা নিয়ে মারামারি এমনকি কুপিয়ে গুরুতর আহত করারও ঘটনা ঘটছে।
জেলায় কিশোর গ্যাং তৈরিতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল খালেক। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যে বখাটে কিশোর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তারাই মূলত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ছাত্রলীগ তাদের দিয়ে বিভিন্নভাবে আবার বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে শহরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে অন্তত পাঁচটি সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কয়েকজন কিশোর গুরুতর জখমও হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের এস কে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চায়নিজ কুড়াল ও চাপাতি নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী রাতুল হাসানকে (১৭) কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় আহত ছাত্র বাদী হয়ে পারভেজ মোল্লা (১৯), আল জারিয়াত (১৯) ও আসাদুজ্জামানসহ (২৬) কিশোর গ্যাংয়ের ১০ সদস্যের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়।
এ ছাড়া গতকাল শনিবার বেলা দেড়টার দিকে আইনজীবী সমিতির ২ নম্বর ভবনের সামনে শহীদ রফিক সড়কে কিশোর গ্যাংয়ের একই সদস্যরা চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি ও লোহার রড নিয়ে মহড়া দেয়। এ সময় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। খবর পেয়ে সদর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চায়নিজ কুড়াল ও চাপাতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকিরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় শনিবার রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নূরুল আমিন বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে কিশোর গ্যাংয়ের গ্রেপ্তার তিনজন সদস্যসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এসআই নূরুল আমিন বলেন, আজ দুপুরে গ্রেপ্তার তিন কিশোরকে জেলা কিশোর আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে তাঁদের গাজীপুর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
এদিকে আজ দুপুরে এস কে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অদূরে তালতলা এলাকায় একদল বখাটে কিশোর ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সদর থানা-পুলিশ ১৩ জন কিশোরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছর।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ সন্ধ্যায় বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলা ও গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ১৩ জনকে আটকও করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
শহরের খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশু-কিশোরদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে এখনই ফেরাতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর হতো হবে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের যাতে কোনো ধরনের প্রশ্রয় না দেয়, সে বিষয়ে দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের সচেতন থাকতে হবে। অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়াতে হবে।