নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ফাইল ছবি |
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার মুখে ছিল। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার অপসারিত হওয়ার পর দৃশ্যপট বদলে যায়। তিন দিন পর, ৮ আগস্ট, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে গ্রামীণ সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান একের পর এক সরকারি অনুমোদন ও নানা সুবিধা পেতে শুরু করে।
গত কয়েক মাসে কর অব্যাহতি, নিবন্ধন, লাইসেন্সসহ একাধিক বিষয়ে সরকারি অনুমোদন পেয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকায় নতুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’র অনুমোদন, জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স, ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি, এমনকি গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতি ও সরকারের শেয়ার কমিয়ে দেওয়া।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীনে ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ গঠনের আবেদন জমা দেওয়া হয়। মাত্র তিন মাসের মাথায়, ২০২৫ সালের মার্চে এটি অনুমোদন পায়। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে অনুমোদিত প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (জিইএসএল) জনশক্তি রপ্তানির জন্য লাইসেন্স পায়। এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সদস্যপদও লাভ করে।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবার লাইসেন্সের আবেদন করে, তবে আগের সরকার সেটি অনুমোদন দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ৯০ শতাংশ শেয়ার গ্রামীণ সেন্টারের এবং বাকি ১০ শতাংশ গ্রামীণ শিক্ষার মালিকানাধীন।
ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ঠিক এক মাসের মাথায়, ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রামীণ টেলিকমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্স পায়। যদিও প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালেই এ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করে। তবে ২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বৈঠকে আবারও নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয় এবং গ্রাহক-শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা হয়। বোর্ডে সরকারের চেয়ার নিয়োগের ক্ষমতাও বাতিল করা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেয়। যদিও ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি কর অব্যাহতির আওতায় ছিল, ২০২০ সালে তা বাতিল করা হয়। পুনরায় কর অব্যাহতির আবেদন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন দিন পর, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ঢাকার একটি আদালত ড. ইউনূসকে অর্থপাচার মামলায় খালাস দেন। এর আগের দিন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় তাঁর ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ও খারিজ হয়ে যায়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'যেহেতু এসব সিদ্ধান্ত এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাই স্বচ্ছতা ও স্বার্থের সংঘাত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। যৌক্তিকতার ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করাই হবে শ্রেয়।'
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'ড. ইউনূস এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো শেয়ারের মালিক নন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সুবিধা নেন না। প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর নামে হলেও তিনি এগুলোর কর্ণধার নন। যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আগেই দাবি করা হয়েছিল। আগের সরকার রাজনৈতিক কারণে অনুমোদন দেয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০১৪ সালে পূর্বাচলে জমি কেনা হয়েছিল। কয়েক দফায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আবেদন নিতে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি অডিট শেষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।'