প্রতিনিধি বরিশাল
![]() |
বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ স্থগিত হওয়া নেতা মারজুক আবদুল্লাহর সংবাদ সম্মেলন। শনিবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বরিশালে জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় করা একটি মামলা নিয়ে বিতর্কের জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ স্থগিত হওয়া অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও সদ্য পদ স্থগিত হওয়া জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব মারজুক আবদুল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে মারজুক আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, সংগঠনের জেলার আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন ও মুখপাত্র সুমি হক মামলাটিকে পুঁজি করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। তিনি দাবি করেন, নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে এবং তাঁদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আশ্বাসে একেকজনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক ছাত্রলীগ নেতার নাম বাদ দিতে সুমি হক তদবির করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলার আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন বলেন, মারজুক ক্ষোভ থেকে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। তিনি যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাঁদের অনেককেই চেনেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। ক্ষোভের বশে মারজুক অপ্রমাণযোগ্য, পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মুখপাত্র সুমি হক বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকে রক্ষার যে অভিযোগ মারজুক তুলেছেন, তার কোনো প্রমাণ নেই।’
এর আগে গত ১৪ মে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় মারজুক আবদুল্লাহ বাদী হয়ে ২৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামির তালিকায় সাংবাদিক, জেলে ও কৃষকদের নাম থাকায় বিতর্ক দেখা দেয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ মে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন, মুখপাত্র সুমি হকসহ অন্য নেতারা বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মামলার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেন। এরপর ২০ মে রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের জেলা কমিটিতে থাকা মারজুকের পদ স্থগিত করা হয়।
আজ সংবাদ সম্মেলনে মারজুক বলেন, ভুল তথ্যের কারণে কিছু নিরীহ লোক মামলায় আসামি হয়েছেন। তাঁদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আহ্বায়ক সাব্বির বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। মারজুক আরও দাবি করেন, ছাত্রলীগের এক নেতার নাম বাদ দিতে তদবির করেছিলেন মুখপাত্র সুমি হক। তিনি (মারজুক) রাজি না হওয়ায় সংগঠনে তাঁর পদ স্থগিত করা হয়।
মামলায় জামায়াতের দুজন রুকন ও এক প্রবাসীকে আসামি করার বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে মারজুক বিষয়টি এড়িয়ে যান। জেলা আহ্বায়কের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণের জন্য মারজুক সংবাদ সম্মেলনে জামাল খান নামের এক আসামিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত করেন।
এর আগে মারজুকের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মিজানুর রহমানের পরিবার ১৫ মে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছিলেন, মারজুক ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি মিজানুরকে মামলার আসামি করেন। পরে দোকানের মধ্যে আটকে রেখে মিজানুরকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাদী মারজুক নিজে তাঁর লোকজন দিয়ে আসামি ধরে পুলিশে খবর দেন। তিনি বাদী হওয়ায় আসামিকে থানায় আনতে হয়েছিল।
গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরের চৌমাথা এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৪ মে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন মারজুক। মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বরিশাল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, আবুল খায়ের আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা আসামির তালিকায় আছেন। এ ছাড়া মামলায় ব্যবসায়ী, কৃষক, সাংবাদিকসহ অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।