প্রতিনিধি পাবনা

ডায়াবেটিস পরীক্ষার প্রতীকী ছবি

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপজেলায় ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রোগীর হারই বেশি। রয়েছে শিশুও। এদিকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে ওষুধ। অনেকের আবার সামর্থ্য না থাকায় নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছে না। ফলে বাড়ছে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় ঈশ্বরদী ডায়াবেটিস সমিতি ও হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারিভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে কাজ করছে আইডিয়াল চাইল্ড এন্ড ডায়াবেটিক কেয়ার ও লাবিব ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স।

লাবিব ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের ডা. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ সেন্টারে কয়েক শতাধিক ডায়াবেটিস রোগী আছে। তাদের অধিকাংশই পুরুষ। ডায়াবেটিস চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল। ফলে নিম্নমধ্যবিত্ত রোগীরা চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকছে।’

আইডিয়াল চাইল্ড এন্ড ডায়াবেটিক কেয়ারের চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখানে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে ১০-১৫ জন।’

তিনি বলেন, ‘অনিয়মিত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস ও পরিশ্রম কম করার কারণে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ।’

ঈশ্বরদী ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজেন্দ্র নাথ মেহতা বলেন, ‘আমাদের সমিতির আওতায় প্রায় দেড় হাজার নিবন্ধিত রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ৫৫ শতাংশ, নারী রোগী ৪৮ শতাংশ এবং শিশু থেকে যুবক পর্যন্ত রোগীর হার ২ শতাংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালটি প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। নতুন রোগীদের জন্য ৪১০ টাকা ফি নেওয়া হয়, যার মধ্যে ২টি গ্লুকোজ টেস্ট, ২টি রক্ত পরীক্ষা, একটি ইউরিন টেস্ট এবং একটি গাইডলাইন বই সরবরাহ করা হয়’।

শহরের শেরশাহরোড চাকরিজীবী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমার ডায়াবেটিস। প্রতি মাসে আমাকে ২ হাজার ৮০০ টাকার ওষুধ খেতে হয়; যা সংসারের জন্য একটি বাড়তি চাপ।’

বাবুপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী বুলবুল বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। আমাকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার ওষুধ খেতে হয়। সংসারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যয় মেটানোর পর ওষুধ কেনা আমার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া প্রতিনিয়তই ওষুধের দাম বাড়ছে।’

শহরের আকবরের মোড় এলাকার ডা. রুহুল আমিন সৌরভ বলেন, ‘বর্তমানে তরুণ-তরুণীরাও আশঙ্কাজনক হারে ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এটি শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না, মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘শর্করাজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ স্থূলতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি হয়। শিশু-কিশোরেরা ঠিকমতো খেলাধুলা করছে না। এ ছাড়া ডিভাইসে আসক্তি, অপর্যাপ্ত ঘুম, স্থূলতা ও হরমোনের সমস্যার কারণে এ রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, ‘হাসপাতালের একটি কক্ষে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডি) মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীর বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়।’