প্রতিনিধি পাবনা
নদীভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘সাত-আট মাস আগেও আমার বাড়ির থ্যাইকা যমুনা নদী প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। এখন একেবারে বাড়ি আর দোকানের কাছে আইস্যা পড়িছে। পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভাঙন রোধে আস্তে-ধীরে ও দায়সারাভাবে বস্তা ফালাচ্ছে। তাতে ভাঙন থামতেছে না। ভাঙন যেভাবে আমার বাড়ি আর দোকান ছুঁইয়্যা ফালাইছে, তাতে আর দুই-তিন দিন এগুলা টিকবে কি না, সন্দেহ। ভয়ে আমাগরে ঘুম, খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়া গেছে।’
চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার নেওলাইপাড়া গ্রামের মুদিদোকানি মঈনউদ্দিন। বাড়ির সামনেই তাঁর দোকান। এই দোকানের আয়েই চলে তাঁর সংসার। যমুনার ভাঙন যেভাবে বাড়ির পাশে এসে পড়েছে, তাতে ভাঙন রোধ না হলে কয়েক দিনের মধ্যেই দোকানসহ পুরো বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
শুধু
মঈনউদ্দিনের বাড়িই নয়; নেওলাইপাড়া, মরিচাপাড়া ও নতুন বাটিয়াখড়া গ্রামের
অসংখ্য বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে
শতবর্ষী কবরস্থান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
গত দুই-তিন মাসে এ এলাকার অন্তত ৫০০ বিঘা কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বর্ষা আসতে এখনো দেড়-দুই মাস বাকি। কিন্তু এর আগেই যমুনার ভাঙন তাঁদের চরম দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। গত বছর থেকেই যমুনার কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। মাসখানেক আগে হঠাৎ করে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। এর মধ্যে নেওলাইপাড়া ও নতুন বাটিয়াখড়া গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি বলে জানান গ্রামবাসী ও পাউবো কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া মাছখালী, রাকশা ও মরিচাপাড়া গ্রামেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই-তিন মাসে এ এলাকার অন্তত ৫০০ বিঘা কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন পৌঁছে গেছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এতে পাকা বাড়ি, মসজিদ, ক্লিনিকসহ বহু স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই সপ্তাহ ধরে পাউবো ‘জরুরি’ ভিত্তিতে নেওলাইপাড়ার যমুনাপাড়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে। তবে কাজে নেই কোনো গতি। অল্প কিছু বস্তা ফেলে দুই-এক দিন করে বিরতি দেওয়া হচ্ছে। এই ধীরগতির কাজ চলাকালে নেওলাইপাড়ার অন্তত ১৫ বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। এলাকাবাসীর প্রতিবাদেও কাজের গতি বাড়েনি বলে তাঁদের অভিযোগ।
ভাঙনকবলিত পাড়ে দাঁড়িয়ে মরিচাপাড়া গ্রামের আজিমউদ্দিন, ইদ্রিস আলী, শাহাদত হোসেন ও নেওলাইপাড়ার ইশতিয়াক হোসেন জানান, এক বছর আগেও যমুনা ছিল এক কিলোমিটার দূরে। সেখানে ছিল শত শত বিঘা ফসলি জমি। তাঁরা জমি রক্ষায় মানববন্ধন, দোয়া অনুষ্ঠান, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। বহু দপ্তরে আবেদন করেও কোনো উদ্যোগ পাননি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে জমি রক্ষা পেত। এখন নদী আরও আগ্রাসী হয়ে ঘরবাড়ি, কবরস্থান, রাস্তাঘাট পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলেছে।
এ বিষয়ে পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়া উপজেলায় যমুনার কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নেওলাইপাড়ায় আমরা সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেছি। জিও ব্যাগ পেতে সমস্যা হওয়ায় মধ্যে কিছুটা ধীরগতি ছিল। এ ছাড়া ঠিকাদার নিয়েও কিছু সমস্যা হয়েছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ভাঙন অনেকটা থেমে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং ভাঙন পুরোপুরি বন্ধ হবে বলে আশা করছি। নেওলাইপাড়ার পাশের এলাকার ভাঙনরোধেও পদক্ষেপ নিচ্ছি।’