প্রতিনিধি সিলেট

টানা বৃষ্টিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র আরও মোহনীয় হয়ে উঠেছে। সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকেরা। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

যত দূর চোখ যায় শুধু পাথর আর পাথর। ছোট, মাঝারি, বড়—নানা আকারের পাথর। অধিকাংশই সাদা। তবে কালো ও ধূসর পাথরও চোখে পড়ে। সেই পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র স্রোতের স্ফটিক স্বচ্ছ পানি। সীমান্তের ওপারে সারি সারি পাহাড় থেকে কলকল শব্দে পানি এঁকেবেঁকে এপারের ধলাই নদে এসে মিশছে।

দৃষ্টিনন্দন এই স্থানটির অবস্থান সিলেটের সীমান্তঘেঁষা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে। নৈসর্গিক স্থানটি ‘সাদা পাথর’ নামে পরিচিত। ভারত অংশে সবুজে আচ্ছাদিত সারি সারি পাহাড় আর আকাশে মেঘের খেলা। বাংলাদেশ অংশে ‘পানির মধ্যে পাথরের বিছানা’ খ্যাত সাদা পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত স্বচ্ছ শীতল পানিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পর্যটকেরা।

মূলত বর্ষাকালেই সাদা পাথর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামায় বর্ষার আগেই সাদা পাথর যেন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছেছে। গেল বর্ষার পর এ সময়ে সাদা পাথরের সৌন্দর্য আরও মোহনীয় ও অপূর্ব হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় কয়েক দিন ধরে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। মহান মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।

ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া নিয়ে মূল পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে যেতে হয়। জনপ্রতি ভাড়া পড়ে ১০০ টাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেট থেকে যাত্রীবাহী বাস সরাসরি ভোলাগঞ্জে যায়। কেউ চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও যেতে পারেন। ভোলাগঞ্জের ১০ নম্বর সাইটে গাড়ি এসে থামে। পরে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া নিয়ে মূল পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে যেতে হয়। জনপ্রতি ভাড়া পড়ে ১০০ টাকা। প্রতিটি নৌকায় সর্বোচ্চ আটজন যাত্রী পরিবহনের সুবিধা আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চারপাশে শুধু পাথর আর পাথর। কোথাও কোথাও বালুও চিকচিক করছে। সেই পাথর আর বালুর ফাঁক গলে যেন এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ধলাই নদ। নদীর উৎসমুখের আরেকটি অংশ থেকে শাখা নদীর মতো প্রবল বেগে ছুটে আসছে পাহাড়ি শীতল পানি। মূলত এই পাথরের ওপর দিয়ে স্রোতের মতো ছুটে চলা পানিতেই পর্যটকেরা দল বেঁধে উল্লাস করছেন। কেউ কেউ একে-অপরকে ভিজিয়ে দিচ্ছেন। স্বচ্ছ পানিতে নিচের পাথরে বসে অনেকে ছবিও তুলছেন।

সিলেট নগরের শাপলাবাগ এলাকা থেকে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সাদা পাথর ঘুরতে এসেছেন আক্তার হোসেন (৪৮)। তিনি বলেন, এ নিয়ে তৃতীয়বার আসা। বৃষ্টি হওয়ায় পানির স্রোত বইছে। এতে সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়েছে। দিনভর পানিতে দাপাদাপি করার পর নদের পাড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বেড়িয়েছেন। অস্থায়ীভাবে চালু করা একটি দোকানে দুপুরের খাবার খেয়েছেন।

পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র স্রোতের স্ফটিক স্বচ্ছ পানি। সীমান্তের ওপারে সারি সারি পাহাড় থেকে কলকল শব্দে পানি এঁকেবেঁকে এপারের ধলাই নদে এসে মিশছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান। পাথর ও স্বচ্ছ পানির সৌন্দর্য দেখতে আর প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে এখানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন। ছুটির দিনগুলোয় পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় থাকে। এ সময়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত পর্যটক আসেন। পর্যটকেরা পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল পানিতে গা এলিয়ে দেন আর তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করেন দূরের পাহাড়িয়া এলাকার সৌন্দর্যসুধা। শুয়ে-বসে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যান। কেউবা বালুপথ বা পাথর মাড়িয়ে হেঁটে চলেন একাকী কিংবা দলবলে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সার্বক্ষণিক নিয়ে রাখে। তবে ছুটির দিনগুলোয় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়। পর্যটকবান্ধব যাবতীয় সুবিধা সাদা পাথর এলাকায় নিশ্চিত করা হয়েছে।