নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে নানা বয়স ও শ্রেণি পেশার কয়েক শ মানুষ এসেছিলেন। টেলিস্কোপে চাঁদ ও বৃহস্পতি গ্রহ দেখতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তারা এখানে ভিড় জমিয়েছিলেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও অনেক অনেক দূরের পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ ও সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি দেখতে পেরে তাঁরা বেশ খুশি।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ ও বৃহস্পতি গ্রহ দেখার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। চলে সাড়ে আটটা পর্যন্ত। আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
চাঁদ ও বৃহস্পতি দেখতে আসা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরাবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ শেষ করে ঢাকায় আসলাম। ফেসবুকে এই ধরনের আয়োজনের কথা শুনে এখানে আসতে আগ্রহী হলাম।’
![]() |
মহাকাশ দেখার জন্য সার বেঁধে দাঁড়িয়েছেন আগ্রহীরা। রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে, ৩ মে ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মেহরাবুর রহমান বলেন, ‘আমার আসলে ছোটবেলা থেকে এগুলোর প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে যখন ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়ি, তখন থেকে আমার মহাকাশ নিয়ে একধরনের আগ্রহ ছিল। একসময় ভাবতাম অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ফিজিকসের ওপর পড়াশোনা করব। পরে জানতে পারলাম বাংলাদেশের এ রকম সুযোগ নেই। তখন খুব খারাপই লেগেছিল। আজকে প্রথম টেলিস্কোপে বৃহস্পতি গ্রহ দেখার সুযোগ পেলাম। এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের ছিল।’
আকাশ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের উদ্যোগকে খুব প্রশংসনীয় উল্লেখ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি জানি না ঢাকায় এর আগে এ রকম আয়োজন হয়েছে কি না। এ রকম আয়োজন যদি নিয়মিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের লোকজন মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি, কোনো একদিন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ বিষয় (জ্যোতির্বিজ্ঞান) নিয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হবে।’
স্ত্রী ফারহানা আফরোজ ও সন্তান রাশদান মোহসীনকে নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অবস্থিত প্রকাশনী ‘বাতিঘর’–এ এসেছিলেন প্রকৌশলী রাশেক মোহসীন তন্ময়। কেন্দ্রের ভবনের প্রবেশপথে ‘আকাশ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প’ ফেস্টুন দেখে ছাদে চলে আসেন। এই প্রকৌশলী বলেন, ‘ঢাকার ছাদে মহাকাশ দেখার এমন আয়োজন খুব ভালোই লেগেছে। বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি, যাতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ ও বৃহস্পতি গ্রহসহ মহাকাশ খুব ভালো করে দেখতে পারে। এগুলো শিশুদের মনে অনেক আগ্রহ তৈরি করবে এবং উৎসাহ দেবে।’
মাঝেমধ্যেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন সালসাবীল। এবার এসেছেন চাঁদ ও বৃহস্পতি দেখতে। তিনি বলেন, ‘চাঁদটা অনেক কাছ থেকে দেখেছি, ওটা বাস্তব ছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে জুপিটারটা (বৃহস্পতি গ্রহ) খুব বড় এবং স্পষ্ট করে দেখা যায়নি।’
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদ অনেকটা ছোট, আরও বড় হলে ভালো লাগত জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক মানুষ এখানে দেখতে এসেছেন। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। শুধু একটি টেলিস্কোপে দেখানো হয়েছে। আরও দু-একটি হলে আরও সুন্দরভাবে সময় নিয়ে দেখা যেত।’
![]() |
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দুরবিনে চোখ রাখতে পেরে খুশি এক মেয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিন বলেন, ‘৫ মে আমাদের বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মূলত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষেই আমাদের এ কর্মসূচির আয়োজন। ৫ মে অফিস-আদালত খোলার দিন হওয়ায় আমরা আজকে ছুটির দিন বেছে নিয়েছি। অনেক বেশি মানুষকে এমন কর্মসূচিতে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আয়োজন করেছি।’
প্রতি মাসে দ্বিতীয় শনিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদ থেকে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আকাশ দেখার আয়োজন করা হয়ে থাকে জানিয়ে মশহুরুল আমিন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে আকাশের দিকে আগ্রহী করে তোলা। অ্যাস্ট্রোনমিসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এ সময় আকাশ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের পরিচালক মাসুদুল হাসান, জিকরুল আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।