প্রতিনিধি কক্সবাজার ও টেকনাফ
জোয়ারে ভাঙছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সর্বশেষ প্রান্ত সাবরাং ট্যুরিজম পয়েন্ট এলাকা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সর্বশেষ অংশে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুদিনে বঙ্গোপসাগরের অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানছে। এতে টেকনাফের সাবরাং অংশের আড়াই কিলোমিটারজুড়ে সাত–আটটি অংশে ভাঙন ধরেছে। ভাঙন প্রতিরোধে দেওয়া জিও টিউব ব্যাগের ফুটো হয়ে ক্রমেই বিলীন হচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে পূর্ণিমার জোয়ারের ধাক্কায় মেরিন ড্রাইভের একই অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর ইসিবি (ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) জিও টিউব ব্যাগের মাধ্যমে মাটির বাঁধ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করেছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের ধাক্কায় মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হচ্ছে। ধসে পড়ছে জিও টিউব বাঁধ। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ সলিম বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে মেরিন ড্রাইভের জিরো পয়েন্টে (বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত) আড়াই কিলোমিটারের কয়েকটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে। সড়কের পশ্চিম পাশে বসানো জিও ব্যাগের বাঁধ বিলীন হচ্ছে। চলতি মে মাসে সাগরে বেশ কয়েকটি নিম্নচাপ-লঘুচাপ সৃষ্টির কথা রয়েছে। তখন পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানতে পারে। তখন মেরিন ড্রাইভ বিলীন হয়ে পূর্ব পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই এলাকায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির কদর বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশের বিপুল জমি কিনে হোটেল–মোটেল তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে সমুদ্রের বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। সৈকত থেকে অবাধে বালু তোলায় মেরিন ড্রাইভের গোড়ার অংশ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এখন জোয়ারের ধাক্কায় নড়বড়ে অংশের মেরিন ড্রাইভে ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে গত সোমবার থেকে সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ মিটার বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢেউয়ের উচ্চতা থাকে ৩ মিটার। শুক্রবার থেকে উচ্চতা কমে আসতে পারে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ–প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, ৮০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইসিবি তত্ত্বাবধান করে। সড়কের টেকনাফ অংশের বিভিন্ন স্থানে জোয়ারের ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসিবি।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মেরিন ড্রাইভের রক্ষণাবেক্ষণ করে সেনাবাহিনী। ঢেউয়ের আঘাতে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।