প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের অভিযানে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে এটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ সময় পাশের নির্মাণাধীন আরেকটি স্থাপনা ভাঙতে গেলে কবি ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে উচ্ছেদ অভিযান থেকে সরে যান ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা।
সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামী শুক্রবার বীক্ষণের ২ হাজার ১৪৬তম আসর হওয়ার কথা। শুরু থেকে প্রতি শুক্রবার বিরতিহীনভাবে আসরটি বসে। একটি মুক্তমঞ্চে কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি–সাহিত্যিকেরা এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যের আসরে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন।
সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ছয় শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেন। সে জমিতেই প্রশাসন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখানে আমরা এমন কোনো অসামাজিক কাজ করি না যা মানুষের খারাপ লাগার কাজ। এখানে মানুষের কল্যাণ ও কবিতা নিয়েই আলোচনা হয়। কিন্তু কেন ভাঙা হলো, কী অপরাধ, তার কিছুই জানতে পারলাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাহিত্য সংসদের স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সদস্য ও ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আজ সন্ধ্যার পর আমরা আলোচনায় বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতর অবৈধভাবে বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন কিছু ব্যবসায়ী। আজ দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম ও সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এক্সকাভেটর দিয়ে পাঁচটির মতো স্থাপনা ভেঙে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ খননযন্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা গিয়ে প্রতিবাদ করলে অভিযান বন্ধ রাখা হয়। এ সময় সংস্কৃতিকর্মীদের স্থাপনার বৈধ কাগজপত্র দেখানোরও নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। প্রতিবাদের মুখে উচ্ছেদ অভিযান রেখে চলে যান ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। আপনি তাদের কাছে জানতে চাইবেন, তাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট আছে কি না। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব। ওই এলাকা মাদকের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এটি তো হতে পারে না। আজ অভিযানের সময় এসে যারা বাধা দিয়েছে, তাদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
কবি সাঈদ ইসলাম বলেন, ‘ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ কেবল এই শহরের সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র নয়, এটি এই অঞ্চলের শিল্প–সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র। সাহিত্য সংসদের এই মুক্তমঞ্চ ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রশাসন শিল্পচর্চার ওপর আঘাত হেনেছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই এবং অনতিবিলম্বে ভেঙে দেওয়া মঞ্চটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানাই। প্রশাসনকে বলব, অবৈধ নদী দখল ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন, শিল্প–সংস্কৃতির ওপর বুলডোজার চালাবেন না।’
এদিকে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদী কথা, কবিতা ও গানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান সাঈদ ইসলাম।