প্রতিনিধি কুষ্টিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওয়াসিফ আল আবরার নামের ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

ওয়াসিফ আল আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি নিউজ পোর্টাল ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ওয়াসিফ এলাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসেও সাংবাদিকতার নামে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে ওয়াসিফের অংশ নেওয়ার বেশ কিছু ছবি সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। জুলাই আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। এ ছাড়া তিনি শাহ আজিজুর রহমান হলে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর প্রাধ্যক্ষ তাঁকে হল থেকে চলে যেতে বলেন। তবে একটি পক্ষ তাঁকে অবৈধভাবে হলে অবস্থান করতে উৎসাহ দেন। গতকাল রাতে কিছু শিক্ষার্থী হলে গিয়ে তাঁকে চলে যেতে বলেন। তিনি নেমে যাওয়ার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে জানতে চান, কেন তিনি হল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় হট্টগোল। এ সময় ধস্তাধস্তিতে ওয়াসিফ আহত হন। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ওয়াসিফকে মারধর করা হয়নি। বলার পর তিনি চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকে আশ্রয় দেওয়া পক্ষের লোকজন সেখানে এসে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেন।

ওয়াসিফ আল আবরারের অভিযোগ, কিছু শিক্ষার্থী কক্ষের বাতি বন্ধ করে তাঁকে কিলঘুষি দিয়েছেন।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘ওয়াসিফের গুরুতর কিছু হয়নি। আমরা ধারণা করছি, তাঁর শ্বাসনালিতে আঘাত লেগেছে। প্রথমে তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল এবং বমি করছিলেন।’

এ নিয়ে দিবাগত রাত দুইটার দিকে দুটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় কোষাধ্যক্ষ জাহাংগীর আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করেন। পরে প্রক্টর অফিসে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ওয়াসিফকে হল থেকে নামানো না–নামানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহ আজিজুর রহমান হলে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

হলের প্রাধ্যক্ষ এ টি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘হলে ওয়াসিফের এটাচমেন্ট না থাকায় তাঁকে চলে যেতে বলা হয়। এরপরও তিনি হলে থেকেছেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়েছেন। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।’

এ বিষয়ে প্রক্টর শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার পরে আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ওয়াসিফের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। আজ বুধবার সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। ছাত্রদল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছে।