৬৫ বছরে পাবনা প্রেসক্লাব
প্রতিনিধি পাবনা
![]() |
| ৬৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আলোকসজ্জায় সেজেছে পাবনা প্রেসক্লাব। বুধবার রাতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপমহাদেশের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, খ্যাতিমান গীতিকার গৌরি প্রসন্ন মজুমদার, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী, ওস্তাদ বারীন মজুমদার, কবি বন্দে আলী মিয়া, অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন আহমেদসহ অসংখ্য গুণীজনের জন্মভূমি পাবনা। সংস্কৃতি ও সাহিত্যে ঐতিহ্যবাহী এই জনপদেই ১৯৬১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত হয় পাবনা প্রেসক্লাব। ৬৪ বছর পেরিয়ে আজ ৬৫ বছরে পা রাখল সংগঠনটি।
পাবনা প্রেসক্লাব শুধু একটি সাংবাদিক সংগঠন নয়, এটি এ অঞ্চলের সাংবাদিকতার গৌরব, ঐক্য আর অহংকারের প্রতীক। যেখানে সারাদেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি, সেখানে পাবনা প্রেসক্লাব দীর্ঘ ছয় দশক ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
পদ্মা-যমুনা বিধৌত ইছামতি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই জনপদে সাংবাদিকতার শুরু উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের পেশাগত স্বীকৃতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়ে ওঠে পাবনা প্রেসক্লাব।
প্রেসক্লাবের প্রথম সভা হয় সানভিউ ভিলায়, যেটি ছিল দৈনিক আজাদ ও এপিপি-র প্রতিনিধি একেএম আজিজুল হকের বাসা। তিনি হন প্রথম সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সংবাদ প্রতিনিধি রণেশ মৈত্র। প্রতিষ্ঠালগ্নে আরও ছিলেন সাংবাদিক এম আনোয়ারুল হক, শহীদ শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন আহমেদ, ফটোগ্রাফার হিমাংশু কুমার বিশ্বাস, চিকিৎসক ডা. মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু এই প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য।
প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বছরেই ৮ ও ৯ মে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলন। সেই সম্মেলন থেকেই গড়ে ওঠে মফস্বল সাংবাদিকদের সংগঠন, যা পরে রূপ নেয় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতিতে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা পেশাগত স্বীকৃতি পান।
বর্তমানে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৬৫। ক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম। বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন একেএম আজিজুল হক, রণেশ মৈত্র, এম আনোয়ারুল হক, প্রফেসর আব্দুস সাত্তার বাসু, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, অ্যাডভোকেট মুহিউদ্দিনসহ আরও অনেকে।
সংগঠনটির নয়জন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনজন একুশে পদকপ্রাপ্ত। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও ক্লাবের নিজস্ব ভবন হয়নি। পরিত্যক্ত এক ভবনেই এখনো চলছে কার্যক্রম। সম্প্রতি সেখানেই নির্মিত হয়েছে আধুনিক অফিস কক্ষ, মিলনায়তন ও লাইব্রেরি।
এদিকে, ৬৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ক্লাব ভবন আলোকসজ্জা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে র্যালি, আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাব আমাদের গৌরব, ঐতিহ্য। সব বাধা পেরিয়ে এখানকার সাংবাদিকরা আজও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই ঐতিহ্য ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে।’

Comments
Comments