নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

১৩ বছর পর কারামুক্ত হয়ে বুধবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়ার পরদিন কারামুক্ত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম শাহবাগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ধন্যবাদ দিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের ‘মহাবিপ্লবী নায়কদের’।

শাহবাগ মোড়ে রাস্তার পাশে মঞ্চ বানিয়ে জামায়াতের আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে তিনি বললেন, 'আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন।'

৭৩ বছর বয়সী আজহার কারা তত্ত্বাবধানে ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিয়াক ব্লকে ছিলেন । বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সেখান থেকেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সকাল থেকে হাসপাতালে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাদের এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে বরণ করে নেন। পরে একটি কালো রঙের এসইউভিতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগ মোড়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন দলের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারকে।

সভামঞ্চে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে আজহার বলেন, 'প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজকে সকালে মুক্তি পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি স্বাধীন নাগরিক একজন।'

২০১২ সালের ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।

মুক্ত আজহার বলেন, 'আমি সর্বপ্রথম আমাদের মহান আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায়বিচার ছিল না। আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে। এইজন্য আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী… তারা জনগণ ন্যায়বিচার যাতে পায়, সেই ব্যবস্থায় তারা করবেন।'

আজহার তার আইনজীবী দলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তবে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দেন গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের, যাদের কারণে বাস্তবতা বদলে গিয়ে তার মুক্তির পথ তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'যাদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেই ছত্রিশে জুলাই, অর্থাৎ পাঁচই আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্দোলন, তাদের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হতে বাধ্য হয়েছিল। সবচেয়ে আমি ধন্যবাদ জানাব এই ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজকে। যারা অতীতের অহংকার গর্বকে আবার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। ছাত্র সমাজই রাজপথে নেমে রক্ত ঢেলে এই চৌদ্দ পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণকের সাথে নিয়ে তারা রাজপথে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, যার কারণে দম্ভ সব চূর্ণ হয়ে বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে।' 

মুক্তির পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানান  জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সেই সঙ্গে ‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে’ ধন্যবাদ জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, তারা ‘জনগণের পক্ষ নেওয়ার’ কারণেই বাংলাদেশ এ অবস্থায় আসতে সক্ষম হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া এবং বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে মারা যাওয়া জামায়াত নেতাদের নাম একে একে স্মরণ করে আজহার বলেন, 'আমি স্মরণ করছি অত্যন্ত দুঃখবেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, যারা আমার নেতা ছিলেন। তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে তাদের।'

ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সেজন্য বিচার চেয়ে তিনি বলেন, 'এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই যে পর্যায়ে জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হোক। না হলে খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদেরকে।'

জামায়াতের এই জ্যেষ্ঠ নেতা কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, 'জান্নাত পাওয়ার একটাই মাত্র পথ, তা হল শাহাদৎ বরণ করা। তো শাহাদাতই আমাদের জান্নাত দিতে পারে। তাই যে দল, যে জাতি, যে ব্যক্তি শাহাদাৎ তামান্না পেয়ে এগিয়ে যায়, সেই দল সে জাতিকে কেউ দমাতে পারে না।'

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ছয় ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালে আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালে প্রথমবার আপিল শুনানি করে সেই রায় বহাল রেখেছিল তখনকার আপিল বেঞ্চ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কারামুক্ত জামায়াতনেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আপিল শোনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সেই রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এই রায় আসে। এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিলে আর কেউ খালাস পাননি।