নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

৪৩তম বিসিএসের গেজেট-বঞ্চিতরা ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি পালন করেছিলেন  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

দীর্ঘ পাঁচ বছরের অপেক্ষা শেষে ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী গত ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। সে সময় গেজেট-বঞ্চিত ২২৭ জনের জন্য দিনটি ছিল বিষাদের। দেশের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো এই বিসিএসের গেজেট প্রকাশ করা হয় গত মঙ্গলবার। তৃতীয় গেজেটে ২২৭ জনের মধ্যে ১৬২ জনের গেজেট হলেও আবার বাদ পড়েছেন ৬৫ জন।

বাদ পড়া ৬৫ জনের মধ্যে একজন ইকরামুল হক (ছদ্মনাম)। তিনি টানা ছয়টি বিসিএসের প্রিলিমিনারি পাস করেছেন। চারটি বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন। ওই প্রার্থী বলেন, ‘আমার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি গেজেট থেকে বাদ পড়ায় শুধু আমি না, আমার আশপাশে সবাই অবাক হয়েছে। আমার বংশের মধ্যে কেউ রাজনীতিসংশ্লিষ্ট না থাকার পরও আজকে আমি গেজেট-বঞ্চিত। ভুল তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে গেজেট থেকে বাদ পড়েছি।’

বাদ পড়া আরেকজন প্রার্থী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। আমার কোনো পদপদবি নেই। আমি কখনো ছাত্রলীগ করিনি। আমি নিজেও জানি না, এবার কেন আমাকে গেজেট থেকে বাদ দেওয়া হলো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃতীয় গেজেটে বাদ পড়া আরেক প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের কেন বাদ দেওয়া হলো, সে কারণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়নি। দুই সংস্থার প্রতিবেদন দুই রকম হয়েছে প্রায় সবার ক্ষেত্রে। আমার একটির প্রতিবেদন ক্লিয়ার, কিন্তু অন্যটির প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। ভুল প্রতিবেদনের কারণে বাদ পড়েছি আমি। রাষ্ট্রের কাছে দাবি, আমার বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হোক।’

বাদ পড়া আরেক প্রার্থী বলেন, ‘আমার বাদ পড়ার কোনো কারণই খুঁজে পাইনি। আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, যেখানে কোনো রাজনীতি নেই। আমার পরিবারে কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। আমার নামে কোনো মামলা নেই। বর্তমানে আমি একটি সরকারি চাকরিতে কর্মরত। এর আগে আমি ৪১তম বিসিএসে তথ্য ক্যাডারে গেজেটেড ছিলাম। তুলনামূলক ভালো জবে থাকায় সে সময় তথ্য ক্যাডারে যোগ দেয়নি।’

বাদ পড়া ৬৫ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হওয়ায় গেজেটভুক্ত হননি।

দীর্ঘ পাঁচ বছরের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা গেজেটভুক্ত হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু গেজেট থেকে বাদ পড়ায় ২২৭ প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। এরপর গেজেটভুক্ত হওয়ার দাবিতে তাঁরা গত জানুয়ারি থেকে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল থেকে গেজেটে বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থীকে গেজেটভুক্ত করা ও ভেরিফিকেশন নীতি প্রণয়নের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। তাঁদের মধ্য থেকে ১৬২ জনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে মঙ্গলবার।

৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন। ভেরিফিকেশন শেষে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দিয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এরপর ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে প্রথম সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগের দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তৃতীয় প্রজ্ঞাপনে ১৬২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।