প্রতিনিধি মেহেরপুর
![]() |
মেহেরপুরে সদরের আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর একটি পক্ষ সড়ক অবরোধ করলে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী আসে। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মেহেরপুরে সদরের আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৮ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই ইউনিয়নের উত্তর পাড়া গন্ধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ সংঘর্ষ ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন মিজান হোসেন ওরফে মেনন (৪৪), জাহির হোসেন ওরফে চঞ্চল (৫৭), মুকুল হোসেন (৫০), শাকিল আহমেদ (৫১), শহিদুল ইসলাম (৪৪), মিন্টু মিয়া (৩৯), সানোয়ার হোসেন (৪২) ও তৌহিদুল ইসলাম (৪৬)। তাঁদের মধ্যে মুকুল হোসেন ও তৌহিদুল ইসলামের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, দলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমঝুপি ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কমিটি গঠনের পূর্বনির্ধারিত দিন ছিল আজ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম ও তাঁর নেতা-কর্মীরা সেই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য উত্তরপাড়া গন্ধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আমঝুপি বাজারে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তাঁর কর্মীরা হামলা চালান। এতে উভয় পক্ষের আট নেতা-কর্মী আহত হন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলার ঘটনায় পুলিশ সাইফুল ইসলামের চার কর্মীকে আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ইসলাম ও তাঁর কর্মীরা মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সাইফুল ইসলামের কর্মীদের ছেড়ে দেয়। এতে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এখনো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আমঝুপি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিমুল বারি বলেন, ‘ইউনিয়ন সম্মেলনকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে সাইফুল ইসলামের লোকজনের নানা হুমকি শোনা যাচ্ছিল। প্রথমে আমঝুপি হাইস্কুল মাঠ, তারপর নীলকুঠি চত্বরে সম্মেলন করার কথা ছিল। সাইফুল ইসলামের বাধার কারণে উত্তরপাড়া গন্ধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা সম্মেলনস্থলে যাচ্ছিলেন। পথে সাইফুল ইসলাম ও তাঁর ভাই শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা নেতা-কর্মীদের বাধা প্রদান করেন। সে বাধা প্রতিরোধ করতে গেলে তাঁরা লাঠি নিয়ে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও তাঁরা তাদেরও তোয়াক্কা না করে দফায় দফায় হামলা চালান। পরে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম গাড়িবহর নিয়ে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার সময় তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং কামরুল ভাইয়ের ওপর হামলা হয়।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই মাসুদ অরুণের (জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি) পক্ষের নেতা সাইফুল ইসলাম ও তাঁর নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা সম্মেলন বানচাল করার চেষ্টা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষিত মেহেরপুরের আহ্বায়ক কমিটিকে মেনে নিতে চাননি। তাই সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।’
পাল্টা অভিযোগ করে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বেআইনিভাবে তাঁরা আমঝুপি ইউনিয়নের সম্মেলন করছেন। আমরা বাধা প্রদান করেছি।’ সদস্যসচিব কামরুল হাসানের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাসুদ অরুণ বলেন, ইউনিয়ন কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশ কিছুদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিলেন জেলার সদস্যসচিব কামরুল ইসলামের ওপরে। বিশেষ করে ইউনিয়ন কমিটি গঠনে স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাউন্সিল করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিবাদ বাধে। যেকোনো কাউন্সিল করার আগে বিএনপির সব স্তরের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। আহ্বায়ক কমিটি এখানে ব্যর্থ হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দীন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের বিষয়ে এখনো কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।