প্রতিনিধি রাজশাহী

রাজশাহীতে আম পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও সংগ্রহ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ম্যাংগো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহীতে গাছ থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের সময়সূচি ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার রাজশাহী জেলার আম পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও সংগ্রহবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

ঘোষিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গুটি আম ১৫ মে থেকে বাজারজাত করা যাবে। ২২ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানিপসন্দ ও লক্ষ্মণভোগ, ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি, ১০ জুন থেকে ব্যানানা ম্যাংগো ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই পাকা সাপেক্ষ পাড়া যাবে।

আজকের সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। তিনি ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা, আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান, চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসানসহ আমসংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ‘অপরিপক্ব আম যাতে ভোক্তাদের কাছে না যায়, এ জন্যই আমাদের এই ক্যালেন্ডার। জাতের কারণেই আম পাকার তারতম্য হয়। কৃষক ও সব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিজেরা আমবাগানগুলোয় ঘুরে দেখেছি। তারপর একটা তালিকা আমরা নির্ধারণ করেছি।’

জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, চাষি ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষ যাতে জীবাণুমুক্ত, ফ্রেশ আম পায়, সেই জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করেন, সেই বিষয়টিও আমরা দেখব।’ তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের কারণে কোথাও যদি নির্ধারিত তারিখের আগে আম পাড়ার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে অনুমতি নিয়ে আগে আম পাড়ার ব্যবস্থা করা যাবে।

রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় জেলার অর্ধেকের বেশি আম চাষ হয়। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের চাষি আনোয়ার হোসেন। তাঁর নিজের ও ইজারা নেওয়া ৬০ বিঘা আমবাগান রয়েছে। তিনি  বলেন, তাঁর বাগানের বৈশাখী গুটি আম ইতিমধ্যে পাকা শুরু হয়েছে। চোরুষা জাতের গুটি আম তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পেকে যাবে।

গত বছর আম পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ৬ থেকে ১৪ জুন পাঁচ দিনে ট্রেনে আম পরিবহন করা হয়েছিল। তাতে ১৬ হাজার ২৬০ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছিল। এবার এ রকম কোনো ট্রেন থাকবে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, আমের উৎপাদনের ওপরে নির্ভর করে যে বিশেষ ট্রেন চালু করা হবে কি না। এ থেকে বাণিজ্যিকভাবে কোনো আয় হয় না। সেবামূলক ব্যবস্থা। এবার যে রকম খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তো আম একটু কম হয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে। আম বাজারে উঠলে তাদের লোক বাজার তদারকি করে দেখবেন যে বিশেষ ট্রেনের প্রয়োজন হবে কি না। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।