নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
কালুরঘাট সেতুর নকশা | ছবি: বাংলাদেশ রেলওয়ে |
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে বুধবার। মাত্র ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারে খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা দেশের ব্যয়বহুল পদ্মা ও যমুনা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের কাছাকাছি।
সেতুর সঙ্গে থাকবে দুই পাশে উড়ালপথ ও রেল বাঁধ। রেল চলাচলের জন্য নির্মাণ হবে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপথ এবং সড়কের জন্য ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার। পাশাপাশি ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল বাঁধও তৈরি করা হবে। এসব কাঠামো নির্মাণ এবং প্রায় ১৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে যাওয়াতেই প্রকল্পের ব্যয় বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, এর পরিকল্পনা ও প্রস্তাব তৈরি হয়েছিল আগের সরকারের আমলে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কালুরঘাট সেতুর প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় পদ্মা ও যমুনা সেতুর মতোই বেশি। পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যমুনা রেল সেতুর ক্ষেত্রে তা ১ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, আর কালুরঘাটে ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
ডিপিপির তথ্য অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণে খরচ হবে ৮৬১ কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে বড় ব্যয়ের অংশ হলো রেল উড়ালপথ—৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ছে ৩৩৩ কোটি টাকা, যেখানে পদ্মা সেতুর রেল উড়ালপথে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছিল ২৬৩ কোটি টাকা।
এই সেতুর উড়ালপথে নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে ১২ দশমিক ২ মিটার উচ্চতা রাখা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে পদ্মা সেতুর উড়ালপথে এই উচ্চতা ছিল ১৮ মিটার। অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চতা কম হলেও ব্যয় বেশি হওয়ার বিষয়টি প্রশ্ন তুলতে পারে।
তবে ভারতের অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা। সেদেশের ‘কাটনি গ্রেড সেপারেটর প্রকল্পে’ রেল উড়ালপথ নির্মাণে প্রতি কিলোমিটার খরচ হচ্ছে মাত্র ৫২ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'সেতুর দৈর্ঘ্য কম হলেও উড়ালপথ, রেল বাঁধ ও অন্যান্য কাঠামোর কারণে ব্যয় বেশি হয়েছে। অর্থায়নকারী সংস্থা ইডিসিএফের প্রাথমিক সমীক্ষার আলোকে এই প্রাক্কলন তৈরি হয়েছে। তবে এখনো দরপত্র ডাকা হয়নি, ফলে খরচ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।'
২০১৪ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একমুখী রেল ও সড়ক সেতুর জায়গায় নতুন একটি আধুনিক সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৮ সালে তৈরি ডিপিপিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। তখন সেতুতে ছিল একপথের রেল চলাচলের ব্যবস্থা। পরে ২০২৪ সালে হালনাগাদ ডিপিপিতে দ্বিমুখী রেলপথ, অতিরিক্ত উড়ালপথ, সেতুর বাড়তি উচ্চতা ও সড়ক অংশ যুক্ত হওয়ায় ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ১১ গুণ বেশি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, 'যেহেতু এটি জিটুজি ভিত্তিতে নয়, তাই প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রকল্পের খরচ কমানো সম্ভব। এ জন্য দরকার স্বচ্ছ ও দক্ষ ক্রয় প্রক্রিয়া।'