প্রতিনিধি শেরপুর
![]() |
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার বিকেলে ভোগাই নদী থেকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভারতের মেঘালয়ে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদ–নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার বিকেলে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদ–নদীর পানি বাড়ছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বেলা তিনটায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ১৮৪ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীতে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি সকাল থেকে বাড়তে শুরু করেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, ২০ মে পর্যন্ত ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বন্যা মোকাবিলায় শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ের কৃষকদের দ্রুত আধা পাকা ধান কেটে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় যেসব ধান ৯৫ শতাংশের বেশি পেকে গেছে, তা দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এরই মধ্যে জেলার ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকি ধানগুলোও দ্রুত কেটে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কয়েক দিন ধরে জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সোমবার রাতে কয়েক দফায় ভারী ও মাঝারি বৃষ্টির কারণে ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলায় টানা বৃষ্টিতে জেলার চেল্লাখালী, ভোগাই, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে ও উপচে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে ধারণা করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।
সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের বাসিন্দা হুরমুজ আলী (৬৮) বলেন, ‘ভারতে মেঘ অইলে আমগর গাঙ্গে (নদী) ঢল নামে। আজ সহাল (সকাল) থাইকা গাঙে ঢল নামছে। পানিও বাড়তাছে। এই রহম বাড়লে বন্যা অইবো। তখন সবাইর বিপদে পড়ুন লাগব।’
ঝিনাইগাতীর ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সোমেশ্বরী নদীর পানি গতকাল রাত থেকে বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ও বৃষ্টি হলে নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
বাঘবেড় ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরে আলম বলেন, সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতে বৃষ্টি হওয়ায় চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। তবে এখনো নদীর বাঁধের কোথাও ক্ষতি হয়নি। তবে পানি বাড়তে থাকলে বাঁধ ভেঙে ও উপচে বন্যা হতে পারে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম বলেন, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি রাত থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস পেয়ে উপজেলায় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সতর্কমূলক প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। নদীসংলগ্ন এলাকায় খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
নালিতাবাড়ীর ইউএনও ফারজানা আক্তার বলেন, দুটি নদীর পানি বেড়েছে। তবে এখনো বাঁধ ভেঙে বা উপচে পড়ার মতো পানি আসেনি। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পাউবোর শেরপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, জেলার চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতে টানা বৃষ্টি হওয়ায় গতকাল রাত থেকে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার চারটি নদীতে পানি বেড়েছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে ঢলের পানিতে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টি না হলে বন্যার আশঙ্কা থাকবে না।