প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির লোকজনকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ তুলে সদ্য ঘোষিত উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে চারজন নেতা পদত্যাগ করেছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে উলিপুর শহরের হাজী সুপার মার্কেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা করেন তাঁরা।
পদত্যাগকারীরা হলেন সদ্য ঘোষিত উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম (ফুলু), পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান নূরেচ্ছোবাহ্ স্টার, মতলেবুর রহমান ও পৌর বিএনপির সদস্য আমিনুল ইসলাম।
এর আগে গত বুধবার তারিক আবুল আলা চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও হায়দার আলী মিয়াকে সদস্যসচিব করে ২১ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। একই দিন পৌর বিএনপিরও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে নুর মোহাম্মদকে আহ্বায়ক ও সোলায়মান আলীকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির তারিক আবুল আলা চৌধুরী বিগত ১৭ বছরে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
পদত্যাগকারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবুল আলা চৌধুরী জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জাফর আলীর পক্ষে ভোট প্রচারণায় ছিলেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করিয়ে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন। সম্প্রতি সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিএনপির জন্য বিব্রতকর।
লিখিত বক্তব্যে নেতারা বলেন, ‘পৌর আহ্বায়ক কমিটির ১৭ নম্বর সদস্য রফিকুল ইসলাম বিগত দিনে উপজেলা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ভোটের মাঠে কাজ করেছেন। আহ্বায়ক কমিটির ১৮ নম্বর সদস্য শহিদুল রহমান ফ্যাসিস্ট বিরোধী মামলার ৬৩ নম্বর আসামি। তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে ২০১৯ সালে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আহ্বায়ক কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতাদের স্থান না হলেও বিতর্কিত ব্যক্তি ও ফ্যাসিস্টের দোসরকে আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা পদত্যাগ করলাম।’
এ সময় আমিনুল ইসলাম, মতলেবুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল, সাবেক ছাত্রনেতা ফিরোজ কবীর কাজলসহ সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগ করা নেতাদের সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তফাকে মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ওরফে বেবু বলেন, ‘এখনো পদত্যাগপত্র পাইনি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও লোকমুখে তাঁদের পদত্যাগের কথা শুনেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদত্যাগপত্র হাতে আসার পর আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা আলোচনা করবেন। দলের প্রতি আনুগত্য না থাকায় এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। বিএনপির কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে নেতা–কর্মীদের অভাব নেই। তাঁদের ওই সব পদে নতুন ত্যাগী নেতাদের স্থলাভিষিক্ত করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক তারিক আবুল আলা চৌধুরীর ভাষ্য, যে চারজন আজ পদত্যাগ করেছেন তাঁরা অতীতে উপজেলা বিএনপির মূল গ্রুপের সঙ্গে ছিলেন না। তাঁরা অন্য একটি বিতর্কিত গ্রুপের সঙ্গে ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা উপজেলা বিএনপি কোনো প্রোগ্রামে তাঁদের পাইনি। চলতি মাসের ১ মে শ্রমিক দিবসের প্রোগ্রামেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। তাঁরা বিএনপির নিষ্ক্রিয় সদস্য ছিল।’