প্রতিনিধি বগুড়া
সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি, আওয়ামী লীগ শুধু ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরের মাহফিলে শত শত ভাইকে হত্যা করেনি, ২০২৪–এর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাজারের অধিক ভাইকে খুন করেছে। এই আওয়ামী লীগ নির্বিচারে নামে-বেনামে অসংখ্য মানুষকে গুম-খুন-হত্যা করেছে। খুনি হাসিনা ও তাঁর সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই আর এ দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে না।’
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে (পৌর পার্ক) এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও তাদের বিচারের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বগুড়ার উন্নয়নবঞ্চনার কথা উল্লেখ করে সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু রক্তের ওপর দাঁড়িয়েছিল এমন নয়; আওয়ামী লীগ জেলা, দল ও ব্যক্তির নাম ধরেও বৈষম্য করেছে। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল, সেই স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বগুড়ায় যে হাসপাতাল আছে, সেটি দেশের প্রথম শ্রেণির হাসপাতাল হতে পারত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই হাসপাতালকে দেশের চতুর্থ শ্রেণির হাসপাতাল করে রেখেছে। এই হাসপাতালে উন্নত যন্ত্রপাতি দেওয়ার বদলে এখান থেকে যন্ত্রপাতি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
বগুড়ার ভৌগোলিক গুরুত্ব উল্লেখ করে সারজিস বলেন, বগুড়া শুধু উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার নয়, উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শহরের একটি। এই বগুড়ায় সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিমানবন্দর চালু হতে পারত, কিন্তু তারা বিমানবন্দর কুক্ষিগত করে রেখেছে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, বগুড়ায় বিমানবন্দর লাগবেই। অনতিবিলম্বে বিমানবন্দর চালু করতে হবে। বগুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় লাগবেই। বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হতে হবে। ঢাকা-বগুড়া সরাসরি রেলপথ নির্মাণ করতে হবে।’
বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলনের নাম উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে এই মাসুদুর রহমান মিলন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, শত বছরের ঐতিহ্যের প্যালেস দখলে রেখেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জায়গা দখল করে ব্যাংক বানিয়েছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থা দখলে রেখেছেন। এই এক দিনে এবং একা এই মিলন হয়ে ওঠেননি, যাঁদের কেন্দ্র করে বগুড়ায় রাজনৈতিক দলের শত শত নেতা-কর্মীকে যুগের পর যুগ অত্যাচার চালানো হয়েছে, সেই সব দালালকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুত্থানে যে কটা জেলায় আক্রমণ হয়েছে, একের পর এক শহীদদের রক্ত ঝরানো হয়েছে, আমার ভাই-বোনের শরীর থেকে রক্ত ঝরানো হয়েছে, সেই জেলা বগুড়া। বিগত ১৬ বছরে যে জেলার নাম শুনলে উন্নয়ন থেকে শুরু করে চাকরির পদোন্নতিতে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে, সেই জেলা বগুড়া। শুধু নাম শুনলে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে, সেই জেলা বগুড়া। অভ্যুত্থান–পরবর্তী শত শত ত্যাগের বিনিময়ে সেই জেলায় আজ আমরা একটি দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি, তা হচ্ছে খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। যে দলের নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবিতে আজ সেই রণক্ষেত্র বগুড়ায় আমরা দাঁড়িয়েছি।’
আওয়ামী লীগকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে সারজিস বলেন, ‘শহীদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, আহতদের শরীরের ক্ষত এখনো শুকায়নি। সেই খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এ দেশে আওয়ামী লীগের নাম নেওয়া হয়? এনসিপির পক্ষ থেকে, ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, এই খুনি, সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ এ দেশে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। আগামী দিনে বাংলাদেশে এই সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ যেখানেই দেখবেন, ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল ইসলাম, সাদিয়া ফারজানাসহ প্রমুখ নেতা বক্তব্য দেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার আগে দলের দুটি পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
এ ব্যাপারে এনসিপির বগুড়া জেলার অন্যতম সংগঠক আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার বগুড়ায় এনসিপির বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশের কতিপয় নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে এসে সারজিস আলমের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এ সময় হাতাহাতি হয়েছে। পরে তাঁদের প্রতিহত করে সমাবেশস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’