প্রতিনিধি পটুয়াখালী

পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে বাবার লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছে কিশোর মেহনাব হোসেন। বুধবার সকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড়ডালিমা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রবাস থেকে আসা বাবার লাশ দাফন করেই দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিতে হলো ১৫ বছর বয়সী কিশোর মেহনাব হোসেনকে। আজ বুধবার সকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড়ডালিমা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মেহনাব হোসেনের বাবার নাম মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)। আজ সকাল সাড়ে আটটায় নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা মো. আলাউদ্দিন আহম্মেদের কবরের পাশে তাঁর দাফন করা হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর লাশ পৌঁছায়। ওই রাতেই গ্রামের বাড়ি বড়ডালিমায় মরদেহ নিয়ে আসা হয়।

প্রায় সাত বছর আগে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মালদ্বীপ গিয়েছিলেন মো. জসিম উদ্দিন। কথা ছিল আসছে ঈদুল আজহার আগে বাড়ি ফিরবেন। পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন। গ্রামের বাড়ি বড়ডালিমাতে ফিরলেন ঠিকই। তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্যদের সঙ্গে ছেলে মেহনাব হোসেন বাবার লাশের খাটিয়া কাঁধে করে কবরের কাছে নিয়ে যান। লাশ কবরে রেখে দাফন সম্পন্ন করে ছুটে যান পরীক্ষার কেন্দ্রে।

কালাইয়া রব্বানিয়া কামিলা মাদ্রাসাকেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে মেহনাব হোসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মেহনাব হোসেন এ বছর কালাইয়া রব্বানিয়া কামিলা মাদ্রাসাকেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ কৃষি বিষয়ের পরীক্ষা হয়। তার ছোট বোন মোছা. জেরিন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

জসিমের ছোট ভাই মো. মাহফুজ বলেন, জীবিকার তাগিদে ২০০৫ সালে সৌদি আরব গিয়েছিলেন জসিম। ২০১৭ সালে বাড়ি ফিরে এসে মুরগির খামার করেছিলেন। মুরগির খামারে লোকসানে প্রবাসের আয় করা সব টাকা শেষ হয়ে যায়। উল্টো ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৮ সালে চলে যান মালদ্বীপে। মালদ্বীপের কুলহুধুফুশি আইসল্যান্ডে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। আসছে ঈদুল আজহায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ২৫ এপ্রিল, শুক্রবার বুকে ব্যথা নিয়ে মালদ্বীপের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই বাসায় ফিরে যান। পরের দিন শনিবার রাতে বুকে ব্যথা অনুভব হলে সহকর্মীরা তাঁকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত চারটার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জসিম উদ্দিনের স্ত্রী মোসা. মাসুমা আক্তার (৩৭) বলেন, স্বপ্ন ছিল কাজ করে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন; সংসারে ফিরিয়ে আনবেন সচ্ছলতা। হাসি ফোটাবেন স্ত্রী-সন্তানদের মুখে। স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তেও এসেছিলেন। ঠিক তখনই মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন।