প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
পদ্মা নদীতে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার প্রথা বাতিল করার দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পদ্মা নদীতে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার প্রথা বাতিল করার দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ করেছেন চরের বাসিন্দারা। রোববার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হয়। এতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর আলাতুলি ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ওই ইউনিয়ন দুটিতে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। পদ্মা পাড়ি দিতে তাঁরা খেয়াঘাটের ঘাটিয়ালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ৫৪ বছর ধরে ঘাটিয়ালরা বাড়তি টোল আদায় করছেন। মালামাল পরিবহনে নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। তাঁরা এখন থেকে ঘাটের ইজারা চান না। শুধু মাঝিরাই নৌকা চালাবেন ঘাটে।
জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে শুধু চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দারা এ দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। তাঁরা গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা ভাটোপাড়া, বিদিরপুর ও প্রেমতলী খেয়াঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি জানাচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আজ কর্মসূচিতে অংশ নেন চর আলাতুলির বাসিন্দারাও। তাঁরাও এ চরে পারাপারের ভগবন্তপুর ও আলাতুলি ঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহীল কাফি। তিনি বলেন, ইজারাদারেরা ঘাটের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে সাধারণ মানুষকে বছরের পর বছর হয়রানি করে আসছেন। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আদায় করা হয়, নৌযান চলাচলে বাধা দেওয়া হয় এবং মাঝেমধ্যে চরবাসীকে মারধরের মতো ঘটনাও ঘটে। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে।
মোশারফ হোসেন ইমন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘এই ঘাট ইজারা বাতিল চাই, আমাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে, আমরা এই ঘাট চিরদিনের জন্য বাতিল চাই। আমাদের অঞ্চলে সাধারণ মানুষদের তারা জিম্মি করে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। চরের মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল, সেসব দুর্বল মানুষকে নিয়ে তারা জোর করে ভয় দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাশিল করছে, আমরা এই ঘাট থেকে মুক্তি চাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চরের বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘাটের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। আমাদের সঠিক নিয়মে ঘাটের টাকা নিতে বারবার বলেছি, কিন্তু তারা জোর করে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা আদায় করে। তাই আমরা চিরদিনের জন্য ঘাট বাতিল চাই।’
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, ‘আমরা ঘাটিয়ালকে বলেছি আমাদের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না। কিন্তু তারা শোনেনি। আমাদের এই অঞ্চলে ঘাটের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই ঘাটের জ্বালা থেকে মুক্তি চাই।’
সমাবেশ শেষে চরবাসীর পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। পরে তিনি চরের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এক মাসের জন্য খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১১ মে তাঁদের সময় শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে ইজারাদার অতিরিক্ত টোল আদায় করবেন না। কোনো রকম হয়রানিও করবেন না। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে খেয়াঘাট চলবে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চরের বাসিন্দারা আজ এসে খেয়াঘাট ইজারা প্রথা বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁরা ঘাট রাখতে চাচ্ছেন না। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা একটা কমিটি করব। কমিটি মতামত দেবে। তারপর প্রতিবেদনটি স্মারকলিপিসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’