প্রতিনিধি জামালপুর
নদীতে বাঁধের কারণে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নদীভাঙন থেকে রক্ষায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দশানী নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী। বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
বাঁধের কারণে পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী হলো দশানী। এটি দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দশানী নদী থেকে আরেকটি শাখা বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খাপড়াপাড়া গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রতিবছর এই এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে এলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খাপড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা সম্প্রতি নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন।
ওই বাঁধের ফলে নদীর পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী, শেখপাড়া, খানপাড়া, বাঙালপাড়া, মদনেরচর, নীলেরচর, কুতুবেরচর, চরগাজিরপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বকশীগঞ্জের চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দারাও নদীতে আরেকটি পাল্টা বাঁধ নির্মাণ করেন।
পাল্টাপাল্টি বাঁধ ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসক, দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ অপসারণ করা হয়নি। বাঁধ এলাকায় নিরাপত্তার কারণে অপরিচিত কেউ সহজে প্রবেশ করতে পারছেন না।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম রোববার বলেন, ‘নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা করেছি। উভয় পক্ষ বাঁধ অপসারণে সম্মত হয়েছে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। আশা করি, তারা স্বেচ্ছায় বাঁধ সরাবে। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘খাপড়াপাড়ার বাঁধের কারণে সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আইরমারীতে পাল্টা বাঁধ দিয়েছি।’
খাপড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নদীভাঙনে বহু ঘরবাড়ি ও জমি বিলীন হয়েছে। বহুদিন ধরে দাবি জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই নিজেদের অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণ করেছি, যাতে বর্ষায় নদীর পানি গ্রামে ঢুকতে না পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, নদীতে পানিপ্রবাহ বন্ধের জন্য বাঁধ নির্মাণের কোনো নিয়ম নেই। নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁধ অপসারণ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।