নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আসিফ ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পিএসসি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া ও পিএসসির কয়েকজন সদস্য বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। পরে পিএসসির সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূইয়া রাজু ভাস্কর্যে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে।
পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া বলেন, ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ৮ মে থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীদের আরও যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো রয়েছে তার জন্য সরকারের একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী দ্বিতীয় একটি পিএসসি করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকগুলো সংস্কারের চিন্তা সরকারের আছে। সে বিষয়গুলোতে এখানকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা বিদ্যুৎ উপদেষ্টার সঙ্গে বসে তাঁদের মতামতগুলো তুলে ধরবেন। এ ছাড়া পিএসসির যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন তাঁদের সঙ্গেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বসবেন। আলোচনার মাধ্যমে তাঁরা পিএসসির একটা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য কাজ করবেন। তিনি বলেন, যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে এবং শিক্ষার্থীদের এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যুক্ত করে নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে।
এই ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন মোস্তাকিন আহমেদ আশিক বলেন, লিখিত প্রজ্ঞাপন জারি করে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি না জানানো পর্যন্ত তাঁদের এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।
পিএসসির সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ৪৬তম বিসিএস স্থগিত করা হয়েছে এবং যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডাব খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। আগামীকাল কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিকেল পাঁচটায় আমরা গণজমায়েত কর্মসূচি দিয়েছি এবং সমগ্র বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা এই আট দফা দামি আদায়ের জন্য কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শাহবাগ ব্লকেড করেন। এ সময় তাঁরা ‘পিএসসির কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সংস্কার সংস্কার, পিএসসি সংস্কার’, ‘ইন্টেরিম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’সহ নানা স্লোগান দেন। সেখানে উপদেষ্টা আসিফ ও পিএসসির সদস্যরা এলে রাত সাড়ে আটটার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হন। এরপর আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উপদেষ্টা ও পিএসসির সদস্যরা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং রাজু ভাস্কর্যে ৮০ ঘণ্টা ধরে অনশনে থাকা তিনজনের অনশন ভাঙানো হয়। পিএসসির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন সদস্য মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নাজমুল আমীন মজুমদার।