প্রতিনিধি রংপুর ও তারাগঞ্জ
কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। গৃহস্থালির তৈজসপত্র কুড়িয়ে আনছেন একটি পরিবারের সদস্যরা। আজ রোববার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার রমাকান্ত এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রংপুর ও আশপাশের অঞ্চলে বজ্রসহ কালবৈশাখী বয়ে গেছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে ঝড়ে কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অসংখ্য গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া ঝড়ে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের খেত নষ্ট হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে বিভিন্ন এলাকা। ঝড়ে ঘর ভেঙে পড়ে গঙ্গাচড়ার তিনজন আহত হয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
রংপুর আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ১০টার দিকে ঝড় শুরু হয়, চলে দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাত ১০টার দিকে পশ্চিম দিক থেকে হঠাৎ কালবৈশাখী আঘাত হানে। গঙ্গাচড়া, কোলকোন্দ, বড়বিল, মর্ণেয়া, গজঘণ্টা, আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের নুরজামাল মিয়া বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাসে ঘরবাড়ি গাছপালা উপড়ে পড়ে। ঝড়ে তাঁর ঘরের চাল উড়ে গেছে।
ঝড়ে উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের বেশ কিছু বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে রাত থেকে বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ। তবে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, গঙ্গাচড়া উপজেলায় কালবৈশাখীতে দেড় শর মতো বাড়িঘর ভেঙে গেছে। ঘর পড়ে বলবিল ইউনিয়নের দুজন ও লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের একজন আহত হয়েছেন বলে সেখানকার চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
কালবৈশাখীতে তুলার মিলের টিনের ঘর উড়ে গিয়ে গাছে আটকে আছে। আজ রোববার রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বানুপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে কাউনিয়ার সারাই ইউনিয়নের বানুপাড়া গ্রামে দেখা যায়, একটি তুলার কারখানার টিনের চালা উড়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুঁলে আছে। কাউনিয়ার চর মর্ণেয়া ও আলালের চরে ঘুরে গাছপালা উপড়ে সড়কে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
অবশ্য কাউনিয়ার ইউএনও মহিদুল হক তেমন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাননি বলে আজ সকালে জানান।
রংপুর সদর উপজেলার ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের চালের টিন উড়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
গাছ পড়ে ভেঙে গেছে ঘর। আজ রোববার সকালে তারাগঞ্জ উপজেলার জুম্মাপাড়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গতকাল রাত পৌনে ১১টায় হওয়া কালবৈশাখীতে তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ি ও গাছ-গাছালির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক পিলার ও তার ছিড়ে যাওয়ায় রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
পূর্ব সরকারপাড়া গ্রামের দিনমজুর বাবু মিয়ার (৩৫) একমাত্র থাকার ঘরটি ভেঙে গেছে। উড়ে গেছে চাল। বাবু মিয়া বলেন, ‘টাকার অভাবে ঘরটাত খুঁটি দিবার পারো নাই। হঠাৎ ঝড় আসি ঘরটা ভাঙি গেছে। টিন উড়ি গেছে। খাবারে পাও না ঘর বানামো কি দিয়া।’ প্রতিবেশী মামুন সরকার বলেন, বাবু মিয়া এলাকার সবচেয়ে গরিব। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই ঘরে বসবাস করতেন তিনি।
কসাইপাড়া গ্রামের সুজন মিয়া, জগদীশপুর গ্রামের আবদুস সালাম, দোজাহারী গ্রামের সেলানটু, ফকিরপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ঘর ভেঙে গেছে ঝড়ে। তাঁদের কারও ঘরে গাছ পড়ে, কারও চাল উড়ে গেছে, কারও ঘর ঝড়ের বেগে দুমড়ে–মুচড়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, ধান ও ভুট্টার তেমন ক্ষতি হয়নি। আম, লিচুর কিছুটা গুটি ঝরেছে। মাঠে উপসহকারী কৃষি অফিসাররা কাজ করছেন। তাঁদের রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।