প্রতিনিধি পাবনা

ঈশ্বরদীর চরকুড়ুলিয়া গ্রামে টহল জোরদার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

পাবনার ঈশ্বরদীতে জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুষ্টিয়ার ‘মুকুল বাহিনী’ আবারও শক্তি প্রদর্শন করেছে।
 
আজ রোববার সকালে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কয়েক দফা ফাঁকা গুলি ছুড়ে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকুড়ুলিয়া গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। শনিবার সকালেও ওই গ্রামে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার দুপুরের পর সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা অভিযানে চারজনকে আটক করা হয়।

তবে পুলিশ আটক ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি।

গুলিবিদ্ধদের মধ্যে রয়েছেন, চরকুড়লিয়া গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে মো. পিঙ্গু আলী এবং হাবিবুল ইসলামের ছেলে সোয়াইব হোসেন। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে গুলিবিদ্ধ আরও দুইজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

সরজমিনে দেখা যায়, চরকুড়ুলিয়া গ্রামজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ভীত-সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে করে চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে টহল দিচ্ছেন। বেশ কিছু বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। অভিযানের সময় সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্র বলছে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫টি মোটরসাইকেলযোগে একদল লোক ডিগ্রির চরে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল কুষ্টিয়ার মুকুল-তরিকুল বাহিনীর অন্তত ৫০ জনের একটি দল। দুই পক্ষ কাছাকাছি এলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

চরকুড়ুলিয়া গ্রামে অভিযান পরিচালনায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

চরের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ডিগ্রির চর ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্যে হলেও এর অনেক অংশ কুষ্টিয়ার সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় মুকুল বাহিনী জমিগুলো দখলে রাখতে চায়। অন্যদিকে ইয়াছিন বাহিনীও চরের দখলে মরিয়া।'

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন, ‘অনেক বছর পর এমন আতঙ্ক দেখলাম। শিশুরা কাঁদছে, মানুষ রাতের বেলা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে।’

গ্রামের গৃহবধূ রোকেয়া খাতুন আতঙ্কের মধ্যে জানান, 'বাচ্চাগুলারে কোলে নিয়ে দুপুর থেকে ঘরের ভেতর লুকাইয়া ছিলাম। জানি না কখন গুলি লাগবে। এখনো ভয়ে কাঁপতেছি।'

চরকুড়ুলিয়ার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জানায়, 'শুক্রবার হঠাৎ গুলির শব্দে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন তো জীবন বাঁচানই মুশকিল।'

স্থানীয় দোকানি আজিজুল হক বলেন, 'দোকানপাট বন্ধ। কেউ বাজারে আসে না। দুইদিনে এক টাকাও বিক্রি হয়নি। এমন চলতে থাকলে আমরা না খেয়ে মরবো।'

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, 'আধিপত্য ও চর দখল নিয়ে গোলাগুলির খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে।'