প্রতিনিধি যশোর
কাঠের হারমোনিয়াম তৈরির কাজ করেন যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রতন বিশ্বাস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
৫৪ বছর ধরে কাঠের হারমোনিয়াম তৈরির কাজ করছেন যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রতন বিশ্বাস। তাঁর হাতেই নতুন হারমোনিয়ামে প্রথম সুর ওঠে। পুরোনো হারমোনিয়াম মেরামত করে সুর তুলে দেওয়ার কাজও তিনিই করেন।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বি কে সড়কে ‘অপূর্ব মিউজিক’ নামে হারমোনিয়াম তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন রতন বিশ্বাস। একমাত্র ছেলেকেও এই পেশায় যুক্ত করেছেন। বাবা-ছেলে মিলে কাজ করেন।
রতন বিশ্বাস বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর, অর্থাৎ ২০২০ সালের পর থেকেই হারমোনিয়াম বেচাকেনা কমে গেছে। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০টি হারমোনিয়াম বিক্রি হতো। এরপর সেটা কমে ৫ থেকে ৬টায় নামে। এখন মাসে ২ থেকে ৩টা বিক্রি হচ্ছে। ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মানের হারমোনিয়াম তৈরি করে বিক্রি করেন তাঁরা। দাম কমবেশির সঙ্গে সুরের কোনো হেরফের হয় না। আকারে ছোট-বড় অনুযায়ী দাম কমবেশি হয়।
রতন বিশ্বাসের বাবা লক্ষণ বিশ্বাস ছিলেন কৃষক। ঝালকাঠির বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা। সত্তরের দশকে রতনের এক ভাই মন্মথ বিশ্বাস ঝালকাঠি শহরে হারমোনিয়াম তৈরির দোকান দেন। রতন শখের বশে হারমোনিয়াম তৈরির কাজ শিখতেন তখন। পরে বরিশাল শহর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে হারমোনিয়াম তৈরির কাজটি আরও ভালোভাবে শেখেন। দুই বছর কলকাতায় থেকে দেশে ফিরে আবার ভাইয়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। পরে নিজেই ঝালকাঠি শহরে একটি দোকান দেন।
রতন বিশ্বাস বলেন, বিয়ে করেন, সংসার হয়। ঝালকাঠির দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। জীবনের প্রয়োজনে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ১৯৮৬ সালে বাড়ি ছাড়েন। কলকাতা যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, পরে যশোর শহরে এসে থামেন। এখানকার বেজপাড়া পূজার মাঠের পাশে হারমোনিয়াম তৈরির দোকানে কাজ নেন। অগ্রিম ৩০০ টাকা বেতন নিয়ে বাসা ঠিক করে হাঁড়িপাতিল কিনে ঘরসংসার শুরু করেন। দেড় বছর ওই দোকানে কাজ করেন। পরে ‘অপূর্ব মিউজিক’ নামে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
রতন বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে অপূর্ব বিশ্বাস মাধ্যমিক পাস করে বাবার সঙ্গে হারমোনিয়াম তৈরি ও মেরামতের কাজ শুরু করেন। দুই মেয়ে লেখাপড়া করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এখন আর চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। ১৪ বছর বয়স থেকে হারমোনিয়াম তৈরির কাজের সঙ্গে আছি। এখন বয়স ৬৮ বছর। ৫৪ বছর ধরে এই কাজ করছি। যশোর মেডিকেল কলেজের পাশে তিন শতাংশ জমি কিনেছি। সেখানেই বাড়ি করব ভাবছি।’ রতন বিশ্বাস আরও বলেন, ‘মনে শান্তি থাকলে মানুষ গানবাজনার চর্চা করে। ব্যবসা হয়। মনে শান্তি না থাকলেও তো গানবাজনা হবে না। ব্যবসাও হবে না।’