প্রতিনিধি রাজশাহী
৩০ ঘণ্টা ঘোরানোর পর দড়ির ফাঁদ পেতে মহিষটা ধরা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার দইপাড়া মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এক জোড়া মহিষকে পুকুরে গোসল করাতে নামিয়েছিলেন মালিক। হঠাৎ জোড়া ভেঙে একটি মহিষ পুকুর থেকে উঠে দৌড় দেয়। সেটা বৃহস্পতিবার দুপুরের ঘটনা। সারা দিন মহিষটা এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে দৌড়ে বেড়ায়। মালিক ধরতে পারেন না। এভাবে সারা রাত যায়। মহিষটি এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় যায়। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার দুটি বিলের অন্তত ১০ বিঘা ভুট্টাখেত নষ্ট করার পরে দড়ির ফাঁদ পেতে গ্রামবাসী মহিষটাকে আটকাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে মহিষের গুঁতায় ও লাথিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আনারুল ইসলাম ও মাজেদুল ইসলাম নামের দুজনকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আনারুল কোমরে আঘাত পেয়েছেন আর মাজেদুলের নাক ফেটে গেছে।
মহিষের মালিকের নাম এমদাদুল হক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরিপপুর গ্রামে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে আরিপপুর মাঠে একটি সরকারি পুকুরে তিনি জোড়া বেঁধে দুটি মহিষকে গোসল করাতে নামান। হঠাৎ জোড়া ভেঙে দড়ি ছিঁড়ে একটি মহিষ দৌড়াতে শুরু করে। এমদাদুলও মহিষের পেছন পেছন দৌড়াতে শুরু করেন।
এমদাদুল হকের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহিষটা কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না—এই খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনেরাও তাঁর সঙ্গে মহিষের পেছনে যেতে শুরু করেন। সারা দিন বাঘা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে মহিষটি রাতের বেলায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর গ্রামের ভেতরে ঢুকে পড়ে। রাতের অন্ধকারে তাঁরা মহিষটার নিশানা আর খুঁজে পাননি। সারা রাত গ্রামের আশপাশে তাঁরা মহিষের অপেক্ষায় থাকেন। তিন-চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে আরও কয়েকজন বিভিন্ন এলাকায় মহিষের খোঁজ করতে থাকেন।
![]() |
পুঠিয়া উপজেলার দইপাড়া ও দুলবপুর গ্রামের লোকজন সন্ধ্যার একটু আগে মহিষটিকে ধরে ফেলেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাগাতিপাড়ার ভেতরভাগ গ্রামের লোকজন মহিষটাকে দেখতে পান। তখন থেকে এমদাদুল হক তাঁর লোকজন নিয়ে আবার মহিষটিকে ধরার চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু ধরতে গেলেই এক গ্রাম থেকে দৌড়ে আরেক গ্রামে চলে যায়। দুপুরের দিকে মহিষটি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সীমানায় ঢুকে তাহেরপুর সড়ক দিয়ে এগোতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পর পশ্চিম দিকে ঘুরে মহিষটি উপজেলার দইপাড়া ও দুলবপুর মাঠে ঢোকে। দুপুর ১২টা থেকে গ্রামবাসী মিলে মহিষটাকে ধরার চেষ্টা চালান। এই চেষ্টা করতে গিয়েই মহিষের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মালিক ইমদাদুল হক ও তাঁর ছেলে সজলও রয়েছেন।
কোনো উপায় করতে না পেরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তারা জানিয়ে দেয়, এটা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাজ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ইমদাদুল হকের ভাতিজা মো. শিলন পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে যান। কিন্তু শুক্রবার বন্ধ থাকার কারণে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে ছিলেন না। তিনি ফোন নম্বর সংগ্রহ করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, পুঠিয়া উপজেলায় এ রকম একটি মহিষ ধরার কোনো ব্যবস্থা তাঁদের নেই। চিড়িয়াখানায় এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। তাঁদের কিছু করার নেই।
মো. শিলন বলেন, প্রশাসনের কোনো সহায়তা না পেয়ে তাঁরা গ্রামবাসীর সহযোগিতা চান। উপজেলার দইপাড়া ও দুলবপুর গ্রামের লোকজন মিলে বিকেল থেকে দড়ির ফাঁদ তৈরি করে মহিষটি ধরার চেষ্টা করেন। মহিষের হামলায় তাঁরা আহত হন। সন্ধ্যার একটু আগে তাঁরা মহিষটিকে ধরে ফেলেন। শিলন জানান, এই দুই দিনে মহিষের পেছনে ছুটতে ছুটতে তাঁরা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তাঁদের নাওয়া–খাওয়া নেই।
কী কারণে একটি মহিষ এ রকম আচরণ করতে পারে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নানা কারণে পশুদের এ রকম হতে পারে। যেমন অজান্তেই আগে কুকুরে কামড়ানোর কোনো ঘটনা যদি থাকে সে কারণে মহিষ খেপে যেতে পারে। কোনো অসুখের কারণেও এমনটি হতে পারে। নির্দিষ্ট করে এটা বলা যায় না।