নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

‘মায়া বেঙ্গল ইন মোশন: টাইমলেস টেগোর’ অনুষ্ঠানে নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’ পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ ও তাঁর দল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রেমিক বজ্রসেনকে প্রাণে বাঁচাতে মরিয়া ছিলেন রাজসভার নর্তকী শ্যামা। চুরির অপবাদে আটক হন বজ্রসেন; প্রেমিকার কপালে চিন্তার ভাঁজ, চোখে–মুখে রাজ্যের ভয়। প্রেমিককে ছাড়াতে কী করেন শ্যামা?—তা নিয়েই আবর্তিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য শ্যামা। এতে শ্যামা চরিত্রকে প্রাণ দিয়েছেন নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ। চরিত্রটিতে নিজেকে ঢেলে দিয়েছেন তিনি। নৃত্যের ছন্দে প্রেম, আকুলতাকে জীবন্ত করে তুলেছেন এই তারকা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী নাচের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে ‘মায়া বেঙ্গল ইন মোশন: টাইমলেস টেগোর’। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার আলোকি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মৌসহ নৃত্যশিল্পীরা আলো ছড়িয়েছেন। এটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে এমডব্লিউ ম্যাগাজিন বাংলাদেশ ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মায়া।

‘এসো শ্যামল সুন্দর’ গানে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন আনিকা কবির শখ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আয়োজনের শুরুতে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের ছন্দে নৃত্য পরিবেশন করেন আনিসুল ইসলাম হিরু ও মাহবুবা মাহনূর চাঁদনী। আত্মিক জাগরণের গানটিতে সাবলীলভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন হিরু ও চাঁদনী। এই গানেও আকুলতা ছড়িয়েছেন এই নৃত্যজুটি।

২০২৩ সালে প্রথমবার ‘বেঙ্গল ইন মোশন’ আয়োজন করেছিল এমডব্লিউ বাংলাদেশ ও মায়া। এই বছর আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস (২৯ এপ্রিল) উপলক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানটি। এই বছরে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে ‘টাইমলেস টেগোর’। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি সংগীতের আবহে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পীরা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বজনীনতাকে দর্শকের সামনে জীবন্ত করে তুলেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা, আনিকা কবির শখ, তামান্না রহমানরা। ভরতনাট্যম, কত্থক, মণিপুরি ও ওডিশি নৃত্যরূপে নিজেদের মেলে ধরেছেন নৃত্যশিল্পীরা।

বক্তব্য রাখছেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

 নৃত্যনাট্য ভানু সিংহের পদাবলি নিয়ে মঞ্চে আসেন সামিনা হোসেন প্রেমা। মঞ্চে ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে’ গান নিয়ে মঞ্চে আসেন সাবরিনা শফি নিশা, ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন তিনি। ‘আনন্দলোকে’ গানে ওডিশি পরিবেশন করেন বেনজীর সালাম, ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ গানে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন আনিকা কবির শখ।

নৃত্যের ছন্দে ততক্ষণে সন্ধ্যা গড়িয়েছে রাতে। বুঁদ হয়ে নৃত্য উপভোগ করছেন শ্রোতারা। ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানে মণিপুরি পরিবেশন করেছেন তামান্না রহমান। নৃত্যটি দিয়ে পরিবেশনার ইতি ঘটেছে।

আয়োজনের শুরুতে এমডব্লিউ ম্যাগাজিন বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক রুমানা চৌধুরী দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে চাই। “বেঙ্গল ইন মোশন”–এর টিম মায়া, স্কয়ার আমাদের সঙ্গে আছে। সঙ্গে থাকার জন্য স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘সামনেও আমরা একসঙ্গে এটি আয়োজন করব। আশা করছি, অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য হবে। আর মায়া নিয়ে যদি বলি, সবাই মায়ার পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। স্কয়ার কখনোই গুণগত মানে আপস করে না।’

শিল্পীদের পরিবেশনার কারিগরি নির্দেশনায় ছিলেন সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের পরিচালক আনিসুল ইসলাম। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনার সবটাজুড়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রাখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

এই অনুষ্ঠানে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের সরব উপস্থিতি ছিল। বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পীদের মধ্যে জাহিদ হাসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, শাহনাজ খুশি, আজমেরী হক বাঁধন, রুনা খান, মেহজাবীন চৌধুরী, পিয়া জান্নাতুল, শবনম ফারিয়া, মৌসুমী হামিদ, আইশা খান, নীল হুরেজান, রাকিন আবসারসহ আরও অনেকে ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রবেশমুখে বেলি ফুলের মালা দিয়ে দর্শকদের স্বাগত জানানো হয়েছে। এই আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করেছে সান কমিউনিকেশন লিমিটেড।