প্রতিনিধি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
![]() |
কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিএসসি ডিগ্রিধারী কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষা ও বৈষম্যের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি করেন।
কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপাচার্যের বাসভবন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকা প্রদক্ষিণের পর প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমতলায় প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এতে কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কৃষি অনুষদের সব ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন চত্বরে তাঁরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, কৃষিতে ডিপ্লোমাধারীরা ২০২৪ সালের পরও সরকারি নিয়োগে সংরক্ষিত আসনের দাবি করছেন। এটি একেবারেই অনৈতিক। খামারবাড়ি দখলের মতো কাজ করে ডিপ্লোমাধারীরা অনধিকার চর্চা করছেন এবং এখন তারা এমন কিছু দাবি তুলছেন, যেগুলো বাস্তবতা ও পেশাগত ন্যায্যতার পরিপন্থী।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, পদোন্নতির নামে নবম গ্রেডের চাকরির দাবি শুধু অযৌক্তিকই নয়; বরং তা অবৈধ। তাঁরা এসএসসি ও এইচএসসিতে সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে পড়ার সুযোগ পান। এরপর চার বছরের স্নাতক শিক্ষা শেষ করে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নবম গ্রেডের গেজেটেড কর্মকর্তা হন। অথচ ডিপ্লোমাধারীরা সরাসরি বা পদোন্নতির মাধ্যমে ওই গ্রেডে পৌঁছানোর দাবি করছেন। যা তাঁদের ত্যাগ ও মেধার সম্পূর্ণ অপমান।
সমাবেশ শেষে বিকেলে কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক জি এম মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের যে সম্মান ও মর্যাদা, তা ডিপ্লোমাধারীদের সঙ্গে এককাতারে ফেললে দেশের কৃষিবিদ পেশার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। যাঁর যেমন যোগ্যতা, তাঁকে তেমন মর্যাদা দেওয়া উচিত। না হলে কৃষি খাতের সার্বিক ক্ষতি হতে পারে।’
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার কাছে ছয়টি দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন আন্দোলনকারীরা। দাবির মধ্যে আছে—কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (নবম গ্রেড) পদে বিসিএস ছাড়া কোনোভাবেই নিয়োগ না দেওয়া; দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি বন্ধ রাখা; দশম গ্রেডের পদগুলোকে গেজেটেড কাঠামোর বাইরে রাখা; বিএডিসিসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমাধারীদের নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ বন্ধ করা; ডিপ্লোমাধারীদের জন্য কোনো বিশেষ ছাড় দিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত না করা এবং ‘কৃষিবিদ’ পদবি ব্যবহারে কৃষিবিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএসসি কৃষিবিদদের ছয় দফা দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে এবং কৃষিবিদদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে সব সময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’