প্রতিনিধি খুলনা

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করছেন ছাত্রীরা। মঙ্গলবার বিকেলে কুয়েটের রোকেয়া হলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের মধ্যে এবার ছাত্রীদের একমাত্র আবাসিক হল রোকেয়া হলের তালা ভাঙা হয়েছে।

এদিকে বিকেলে ফোন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার। এ সময় তিনি ঘটনা তদন্তে কাল বুধবার কুয়েটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা জানান।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গিয়ে হলের প্রধান ফটকের তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। তালা ভাঙার পর উল্লাসধ্বনি করেন শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীরা হলের চত্বরে ঢোকার পর পুরুষ শিক্ষার্থীরা আবার স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ফিরে আসেন। এরপর নারী শিক্ষার্থীরা হল ভবনের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।

এর আগে ১৫ এপ্রিল ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভাঙেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক হারুনার রশীদ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তারসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের কয়েকজন অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন।

কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীরা অনশন করছেন। মঙ্গলবার কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ সময় ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের জন্য মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা রেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকার পরও আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রেখেছি। আমরা মনে করি, কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে, তা পূরণ করা যাবে না। তোমাদের কাছে অনুরোধ, তোমরা কেউ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আগেই অন্তত চিকিৎসাসেবাটা গ্রহণ করবে।’

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি শিক্ষক প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসে। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করে এবং অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেয়। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড় থাকার ঘোষণা দেন।

ফোন করে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা

এদিকে বিকেলে ফোন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার। এ সময় তিনি ঘটনা তদন্তে কাল বুধবার কুয়েটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা শিক্ষার্থীদের জানান।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধিদলের আগমনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিনিধিদলকে যদি আসতেই হয় তবে আজ রাতের মধ্যে আসতে হবে। এ বিষয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষার্থীরা।

ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমরা এত দিন ধরে আন্দোলন করছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনেক আগেই আমাদের স্মারকলিপি দিয়েছি। এরপর আমাদের দুই মাস অপেক্ষা করতে হলে এখন আবার কিসের তদন্ত কমিটি। স্মারকলিপি যাওয়ার পরও তাহলে কি সেই তদন্তের সুযোগ হয়নি। কেন তদন্ত এখন সরেজমিনে এসে করতে হবে? আমরা সেই কমিটিকে পক্ষান্তর করছি এবং আমরা বলতে চাই, আমরা এখনো আমাদের এক দফা দাবিতে অনড়।’

ব্রিফিংয়ে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘উপর থেকে বলা হচ্ছে, আগামীকাল পাঠাবে। আমাদের ভিসিকে আজকের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। এখানে যে সমস্ত ভাইয়েরা বসে আছেন, তাদের প্রত্যেকের ক্ষতির দায়ভার এই ইন্টেরিমকে নিতে হবে, এই সরকারকে নিতে হবে।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আগামী ২ মে থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন এবং ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোয় প্রবেশ করেন। গত বুধবার দুপুরে মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গত রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন।