প্রতিনিধি কুমিল্লা

সোনালুর সোনার আভায় সেজেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ। কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রকৃতিতে ফিরেছে গ্রীষ্মকাল। বাংলা বছর শুরুর এই ঋতু মৌসুমি নানা ফলের পাশাপাশি পুষ্পপল্লবেও জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতি। গ্রামবাংলার সর্বত্র এখন রংবেরঙের বাহারি ফুলের মনমাতানো সৌরভ। তেমনই এক ফুল সোনালু।

বাংলার প্রকৃতিতে সোনালু যেভাবে শোভা ছড়িয়ে চলেছে, তেমনি দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। রাঙাচ্ছে মানুষের মন। মহাসড়কে সোনালু ফুলের ‘তোরণ’ যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে যানবাহনের যাত্রীদের।

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার অংশ পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। রোববার মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় চোখে পড়ল বিভাজকে হলুদ সোনালুর মেলা। কোটবাড়ী নন্দনপুর থেকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর চক্ষু হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় শত শত সোনালুগাছে ফুটে আছে ফুল। পিচঢালা এই মহাসড়কের পথ যেতে যেতে সারি সারি গাছে সোনালু ফুলের দৃষ্টিনন্দন রূপ মোহিত করছে লোকজনকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গাছের শাখা ছাপিয়ে ঝুমকার মতো ঝুলে আছে সোনালু। হলুদ সোনালুর অপরূপ শোভা মন ছুঁয়ে যাবে যে কারও। মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশের বিভিন্ন স্থানেও দেখা মিলছে হলুদ সোনালুর। বিশেষ করে মিয়ার বাজার এলাকার আশপাশে সোনালুর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া মহাসড়কের দাউদকান্দি, চান্দিনা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন অংশে শত শত গাছে সোনালু ফুল ফুটে রয়েছে। ফুলের সৌরভ আর মনমাতানো রঙে আকৃষ্ট হচ্ছেন চলাচলকারীরা। ব্যস্ততম মহাসড়কের পাশে যানবাহন থামিয়ে সোনালু ফুলের ছবি তুলতেও দেখা যায় অনেককে।

পিচঢালা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পথ যেতে যেতে সারি সারি গাছে সোনালু ফুলের দৃষ্টিনন্দন রূপ মোহিত করছে লোকজনকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সোনালু নিজের প্রিয় ফুলগুলোর একটি বলে জানালেন শাহনাজ পারভীন নামে এক তরুণী। কুমিল্লা নগর থেকে কোটবাড়ীতে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে নেমে সোনালুর ছবি তুলছিলেন তিনি। শাহনাজ বলেন, ‘প্রকৃতিকে হলুদে রাঙিয়ে তুলেছে সোনালু। বিষয়টি সত্যিই দারুণ। ছোটবেলায় বাড়ির পাশে সোনালুর গাছ ছিল; কিন্তু এখন নেই। আজকে এখানে ফুলগুলো দেখে ছোটবেলার স্মৃতিতে ফিরে গেছি।’

সোনালুগাছগুলোর সৌন্দর্য আরও বাড়াতে মহাসড়কের বিভাজক নিয়মিত পরিচর্যা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের যাত্রী আতিক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ফুল ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। দীর্ঘ একটা পথ চলাচলের সময় সোনালুর এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মানুষকে বিমোহিত করবে।’

মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় চোখে পড়ে বিভাজকে হলুদ সোনালুর মেলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকটি স্থানে কিছু গাছ মরে গেছে। সামনে বর্ষা মৌসুমে নতুন করে যেসব স্থানে বৃক্ষরোপণ করা হবে। এ ছাড়া তাঁদের নিযুক্ত শ্রমিকেরা নিয়মিত বিভাজকের গাছগুলোর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন।

ফয়সাল আহমেদ নামের এক মোটরসাইকেলচালক মহাসড়কের জাগুরঝুলি এলাকায় সোনালুর ছবি তুলছিলেন। তিনি বলেন, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশির ভাগ এলাকার বিভাজকই এখন রংবেরঙের নানা ফুলে সেজেছে, যা মানুষকে মুগ্ধ করছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন  বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সোনালুগাছকে একাধিক নামে ডাকা হয়। কুমিল্লা শহর এলাকায় সোনালু নামেই গাছটির পরিচিতি। তবে জেলার কোথাও স্থানীয় লোকজন এটিকে ‘হনালু’ নামেও ডাকেন। সোনালুর ফল দেখতে লাঠির মতো। তাই এটিকে অনেকে লাঠিগাছ বলেও চেনে। আর সোনালু ঔষধি বৃক্ষের তালিকাভুক্ত। সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। এর আদি বাস পূর্ব এশিয়ায়। বৃক্ষটির ডালপালা ততটা ছড়ানো নয়। পাতার রং গাঢ় সবুজ, মসৃণ ডিম্বাকৃতির।

সোনালুর ফল দেখতে লাঠির মতো। তাই এটিকে অনেকে লাঠিগাছ বলেও চেনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এই শিক্ষক বলেন, মাঝারি আকৃতির বৃক্ষটির উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে, বৈশাখে নতুন পাতা গজায়। একটা সময় গ্রামাঞ্চলে সোনালু ফুল প্রচুর দেখা যেত। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। বর্তমানে অনেকে শখের বশে এই গাছ লাগিয়ে থাকেন।

সড়ক বিভাজকে সোনালুগাছ রোপণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সওজের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকে বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে হলুদ সোনালু ফুটে থাকায় মহাসড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে। চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন।