বিনোদন প্রতিবেদক
‘দাগি’ চলচ্চিত্রে বাক্প্রতিবন্ধী চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ্ | ছবি: প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে |
লিখনের মুখে কোনো কথা নেই। তবে চোখ আর অভিব্যক্তিতে হাজারও কথা। কথা বলতে না পারা চরিত্রটিকে কড়ায়–গন্ডায় পড়তে পেরেছেন দর্শক। চরিত্রটির নির্বাক চাহনিতে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক। পর্দা থেকে দর্শকের হৃদয়জুড়ে মায়া ছড়িয়েছেন লিখন; কখনো হাসিয়েছেন, কখনো ভাবিয়েছেন।
লিখন চরিত্রটিকে প্রাণ দিয়েছেন সুনেরাহ্। ক্যারিয়ারে প্রথমবার বাক্প্রতিবন্ধী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, প্রথমবারই লেটার মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন, চরিত্রটির মায়ায় পড়ে গেছেন তাঁরা।
প্রস্তাবটা পাওয়ার পর ভাবতে সময় নেননি সুনেরাহ্। লিখনের জন্যই যেন অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি, ‘ক্যারিয়ারে এমন কিছু চরিত্র করে যেতে চাই। ফলে ভাবতে সময় নিইনি। চলচ্চিত্রের গল্পটাও দারুণ।’
‘ন ডরাই’–এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! চলচ্চিত্রে আয়েশা চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সুনেরাহ্। ‘অন্তর্জাল’ চলচ্চিত্রে প্রিয়াম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’-তেও অভিনয় করেছেন। বরাবরই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে নজর কেড়েছেন তিনি।
‘ন ডরাই’-এর মতোই ‘দাগি’তেও চ্যালেঞ্জটা লুফে নিলেন সুনেরাহ্, ‘চ্যালেঞ্জ নিতে আমার ভালো লাগে। লিখন চরিত্রটা সুনেরাহ্র চেয়ে একদম আলাদা। চরিত্রটা হয়ে ওঠার জন্য চ্যালেঞ্জিং পথটা উপভোগ করেছি।’
সুনেরাহর চরিত্রে ঢোকার পথটাও আলাদা। সারাক্ষণ মহড়া (রিহার্সাল) দেন না; মহড়ার বাইরে চরিত্রটি নিয়ে ভাবেন, হৃদয় দিয়ে ধারণ করার চেষ্টা করেন। সিনেমায় সুনেরাহ্কে বাক্প্রতিবন্ধীদের ইশারা ভাষা চর্চা করতে দেখা গেছে। তবে ভাষাটি তাঁর জানা ছিল না, রপ্ত করতে হয়েছে।
সিনেমা হলে গিয়ে দুবার ‘দাগি’ দেখেছেন সুনেরাহ্। খুব কাছ থেকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেছেন। হলে বসে দাগি দেখার অভিজ্ঞতা বললেন, ‘আমার চরিত্রটির সঙ্গে দর্শক কমিউনিকেট (যোগাযোগ) করতে পারছেন, অনেক দৃশ্যে হেসেছেন। একবার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছি, আরেকবার দর্শকের দিকে। শিল্পী হিসেবে দর্শকের প্রতিক্রিয়া সব সময় আমাকে আনন্দিত করে।’
দর্শকের বাইরে সহকর্মীরাও সুনেরাহর প্রশংসা করেছেন। দাগি সিনেমার অভিনেতা আফরান নিশো বলেছেন, সুনেরাহ্ বিনতে কামাল, তমা মির্জা ও রাশেদ মামুন ছবিটির মূল স্তম্ভ। স্তম্ভ ছাড়া ছবিটি পূর্ণতা পেত না।
এক যুগেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ার, এই কয় বছরে সুনেরাহ্কে হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রে পাওয়া গেছে। সিনেমা কম করার কারণ জানতে চাইলে বললেন, ‘এটা পুরোপুরি চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। প্রত্যেক শিল্পীরই কিছু স্ট্র্যাটেজি (কর্মকৌশল) থাকে। আমি যখন অনুভব করি যে চরিত্রটা পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য লাগবে, তখনই চরিত্রটি করি। আসলে বড় পর্দার দর্শকের চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না, সবকিছু স্পষ্ট বোঝা যায়। ফলে কোনো চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য করাটা জরুরি। সে কারণে আমার কাজের সংখ্যা কম।’
সুনেরাহ্ বিশ্বাস করেন, জোর করে কোনো কাজ করে লাভ নেই। সিনেমার গল্প, টিমটাও ভালো হওয়া জরুরি। একটা সিনেমা একজনকে দিয়ে হয় না, দলগতভাবে কাজটা গুছিয়ে নিতে হয়।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সুনেরাহ্কে টিভি নাটকেও দেখা যায়। তবে ঢাকার বড় পর্দার অভিনেত্রীদের নাটকে খুব একটা দেখা যায় না। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় গিয়ে কেউ কেউ ছোট পর্দা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন।
সেখানে দুই পর্দায় কাজ করার প্রশ্নে সুনেরাহ্ জানালেন, বড় পর্দায় কাজ করলে আর ছোট পর্দায় কাজ করা যাবে না, এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে কোনো সিনেমা করার সময় এমনিতেই ছোট পর্দায় কাজের ফুরসত মেলে না বলে জানান তিনি।
‘যখন কোনো সিনেমার শুটিং করি, তখন ছোট পর্দায় কাজ করা যায় না। তবে কাজ করা যাবে না, এমনটা মনে করি না। আমি অভিনয়ের অনুশীলনের মধ্যে থাকতে চাই। সেটা সিনেমা, নাটক কিংবা থিয়েটার—যে মাধ্যমেই হোক। ফলে সিনেমার বাইরে ছোট পর্দায় কাজ করি। তবে খুব বেশি নাটক করা হয় না। কোনো সিনেমায় যুক্ত হলে সব ছেড়ে চরিত্রের মধ্যে থাকতে হয়, ’ বলেন সুনেরাহ্।
এর মধ্যে একাধিক টিভি নাটকের কাজ শেষ করেছেন। শিগগিরই নাটকগুলো প্রচারে আসবে।