প্রতিনিধি কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় ঘোড়ে শাহ মাজারে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রোববার বিকেলে তোলা ছবি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ভেড়ামারা উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি অভিযান থামিয়ে দ্রুত সেখান থেকে ফিরে যান। তবে ফিরে যাওয়ার সময় মাজারে অবস্থান নেওয়া কয়েক ব্যক্তি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে তেড়ে যান। মারতেও উদ্যত হন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

রোববার বেলা একটার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের বিত্তিপাড়া এলাকায় হজরত ঘোড়ে শাহ (রহ.) বাবার মাজার শরিফে এ ঘটনা ঘটে। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, মাজারে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আপাতত সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে ভেড়ামারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে খবর আসছিল মাজারে প্রকাশ্যে মাদক সেবন হচ্ছে। এই খবর পাওয়ার পর সেখানে রোববার দুপুরে পুলিশসহ ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়। সেখানে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়। সেখানে কিছু ভালো লোক আছে, কিছু খারাপ লোক আছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেখানে কিছু পাগল (নেশাখোর) ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। প্রশাসনের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক মনে হলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট তখনই বিষয়টি জানান। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট সেখান থেকে দ্রুত চলে আসেন।

ইউএনও রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মাজারে সপ্তাহে দুই দিন সোম ও বৃহস্পতিবার কার্যক্রম চলে। কিন্তু রোববারে এত লোক কীভাবে এলো, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। সেখানে মেলার কোনো অনুমতিও নেই। মাজার কমিটিকে বলা হয়েছে মাজার থেকে আজকের মধ্যে নেশাখোর লোকদের সরিয়ে দিতে। তা না হলে কাল (সোমবার) এর বিরুদ্ধে আরও কঠোর অ্যাকশনে যাব। নেশা করলে সহ্য করা হবে না। মাজার আলাদা জিনিস আর নেশা আলাদা জিনিস।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন মাজার প্রাঙ্গণ থেকে দ্রুত বের হচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা। পেছনে কয়েকজন পুলিশ। এ সময় মাজারে অবস্থান করা কয়েক ব্যক্তি লাঠি হাতে ম্যাজিস্ট্রেটের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একজনকে হাত দিতেও দেখা যায়। এ সময় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘোড়ে শাহ (রহ.) বাবার মাজার শরিফ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যে ঘটনা ঘটেছে তা কাম্য নয়। কিছু পাগল এ কাজ করে ফেলেছে। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে চাই। রাত ১০টার মধ্যে সব নেশাখোর পাগলকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মাইকে প্রচার করা হয়েছে। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত মাজারটি। শত বছর আগে থেকে এখানে জিয়ারত হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা আসেন। মাজারে যাতে জিয়ারত নিয়মিত হয়, এ বিষয়ে সহযোগিতা চাই।’

ঘটনার সময় ভেড়ামারা থানার একজন উপপরিদর্শক ও তিনজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন এসি ল্যান্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাজার থেকে পাগল, যারা মাদক সেবন করে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাজার প্রাঙ্গণ আপাতত ক্লিন। উপজেলা প্রশাসন এখনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে কোনো মামলা বা জিডি দেয়নি।