নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
মাগুরাছয় দফা দাবিতে কারিগরি শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ছয় দফা দাবিতে আজ রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা সমাবেশ করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর–১০ নম্বর ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মিছিল নিয়ে এসে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ সময়েই সমাবেশ শুরু হয়। বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেখানে সমাবেশ করেন। সমাবেশে পলিটেকনিকের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘মামা থেকে মাস্টার’, ‘মামাবাড়ির আবদার’, ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার , ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ছয় দফা দাবি মানা না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ শিক্ষার্থীরা একযোগে রাস্তায় নেমে আসবেন বলেন তিনি।
হাসিবুর রহমান আরও বলেন, ‘বৈঠকে বসলেও আমাদের দাবি মানা হয়নি। তাই আমরা এসি রুমে সব বৈঠক বর্জন করলাম।’
পলিটেকনিকের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার পরামর্শক হিসেবে কর্মরত মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, ছয় দফার যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর কারিগরি পদে যেন কারিগরি থেকে আসা দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
![]() |
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশ করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে কারিগরি সেক্টরে যথাযথ কারিগরি জ্ঞান ও উপর্যুক্ত স্কিল, ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হয়। এর একটি ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর। এ পদে সারা দেশের ভোকেশনাল শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষদের আসার কথা ছিল। কিন্তু যাঁরা এসেছেন, তাঁরা জেনারেল শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হলেও সেই শিক্ষা কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে ফলপ্রসূ হয় না। দেশের জনগণকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে এসব পদে উপযুক্ত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ার বিকল্প নেই।’
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম বলেন, সারা দেশে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
![]() |
আন্দোলনকারী কারিগরি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এতে কারিগরির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
পরে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে গত বৃহস্পতিবার ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক আছে। বৈঠকের আগপর্যন্ত রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামও ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ৩টার দিকে।
এই আলোচনায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। এ অবস্থায় তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মশালমিছিল করেন তাঁরা। গত শুক্রবার দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর একযোগে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।