[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগ ৫২ বছরে প্রথম পুনর্মিলনী, বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি রাজশাহী

রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী উপলক্ষে একই রঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরেছেন ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বৃষ্টি থেমে গেছে। বেলাও ঢলে পড়েছে। আখতার বানু আবৃত্তি করছেন দেবাশীষ দণ্ডের কবিতা ‘অ বিদ্যাসাগর মশাই।’ আর তাঁর সাদা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে, চুলগুলো উড়ে উড়ে জানান দিচ্ছে রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বয়স হয়েছে। ৫২ বছর বয়সী এই বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী হচ্ছে এবার। সেই মঞ্চেই চলছে আবৃত্তি।

শুক্রবার দিনব্যাপী এই আয়োজনে এসেছেন সহস্রাধিক প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থী। কেউ কবিতা শুনে হাসছেন। কারও মন একেবারেই সেদিকে নেই। তাঁরা ছবি তুলতে ব্যস্ত। বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকমের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে এসেছেন। কেউ কেউ নিজের ছেলেমেয়েদেরও একই রঙের পোশাক পরিয়ে এসেছেন। রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অতীতকে তাঁরা যেন বর্তমানে টেনে এনেছেন।

পুনর্মিলনী মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি করছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী আখতার বানু। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহী কলেজ মাঠে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও মাঠ ঘিরে ১৪টি স্টল ও ৫টি ফুড কর্নার রাখা হয়। সেখানেও তাঁদের উপচে পড়া ভিড়। মেঘলা আবহাওয়া থাকার কারণে প্রখর রৌদ্র ছিল না। বলতে গেলে মিষ্টি রোদে আয়েশে পাখা মেলেছে তাঁদের মিলনমেলা।

সুপ্রীতি রানি সরকার ছিলেন রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৯৯৯-২০০০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায়। বিয়ে হয়েছে সিরাজগঞ্জে। তাঁরা এখন ঢাকায় থাকেন। এই মিলনমেলায় সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ছেলে সতীর্থ তালুকদার ও মেয়ে সমৃদ্ধি তালুকদারকে। তাঁদের সবার গায়েই হলুদ রঙের পোশাক। তাঁরা মাঠের মধ্যে এক জায়গায় বসেছিলেন এবং তাঁদের হলুদ রং সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল।

আবার ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থীরা সবাই মেরুন রঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে এসেছেন। মজার ব্যাপার, তাঁরা একসঙ্গেই থাকছেন। যেদিকেই যাচ্ছেন দল ধরেই যাচ্ছেন। ছবি তোলার সময়ও একই সঙ্গে দাঁড়ালেন। তাঁরা পুরোনো দিনের গল্পে মেতে উঠেছেন।

একটি স্টলে দেখা হলো ২০০৪-০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাঁরা একই রঙের শাড়ি-ওড়না পরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে মিতু শারমিন ইসলাম রাজশাহী নগরের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সাবিনা ইয়াসমিন ময়মনসিংহে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা করেন, সুমনা তহুরা গৃহিণী ও তাহমিদা লুনা রাজশাহীর তাহেরপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁরা এমন গল্পে মেতে আছেন, দেখে কিছুতেই বোঝা গেল না কে শিক্ষক আর কে গৃহিণী। তাঁরা ফিরে গেছেন কুড়ি বছর আগে। 

একই রঙের শাড়ি পরেছেন ২০০৪-০৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আবার মঞ্চের পাশেই অনুষ্ঠানের সদস্যসচিব-১ আখতার বানুকে ঘিরে আছেন ২০০৪-০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজল, চঞ্চল ও জান্নাতুল ফেরদৌস। আখতার বানু মঞ্চ থেকে কবিতা পড়ে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ঘিরে ধরেছেন তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য। তাঁদের দেখাদেখি একের পর এক চলে ফটোসেশন।

সকাল সাড়ে ৯টায় যখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী একটি শোভাযাত্রা বের করেন। এরপর মঞ্চে অতিথিদের বক্তব্যের পালা ছিল। এখানে শিক্ষার্থীরা অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অতিথিরা স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানের এই পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম আলী। সমাপনী বক্তব্য দেন পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুস সাত্তার। প্রাণান্ত ছোটাছুটি করে সবকিছু দেখভাল করেছেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক প্রার্থী সারথি বিশ্বাস।

অনুষ্ঠান শেষের দিকে ১৯৯৫-৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিশ্ব রঞ্জন সরকার গাইলেন ভূপেন হাজারিকার গান ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি, মরণ ভুলে যাবি, ছুটে ছুটে আয়।’ এ রকম একটি গানের সুরেই যেন শিক্ষার্থীরা বয়সের দূরত্ব ভুলে কলেজ মাঠে ছুটে এসেছিলেন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন