প্রতিনিধি রাজশাহী

রাজশাহীতে আকরাম আলী হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হামলা ও মারধরের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির লাশ রাস্তায় নিয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় সড়কে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফাঁসির দাবি করা হয়।  

গতকাল বুধবার রাতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় আকরাম আলী (৪৫) ও তাঁর ছেলে ইমাম হোসেনকে মারধর করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আকরাম আলী মারা যান। তিনি ওই এলাকার মৃত আজদার আলীর ছেলে। তিনি পেশায় বাসচালক এবং রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। তাঁর মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবার লাশ রেখে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সে পরীক্ষার কেন্দ্রে যায়।

এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় নিহত ব্যক্তির ছেলে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মো. নান্টু (২৮), মৃত রতন মিয়ার ছেলে মো. বিশাল (২৮), মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে খোকন মিয়া (২৮), মো. শাহীনের ছেলে তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২০), মো. নাহিদ (২৫) ও মো. শিশির (২০)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আসামি নান্টু তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদ করেছিলেন আকরামের স্ত্রী। ওই নারী আকরামের স্ত্রীর আত্মীয়। এতে ক্ষিপ্ত হন নান্টু। তিনি আকরামের মেয়ে ও ছেলেকে ক্ষতি করার হুমকি দেন। এর পর থেকে নান্টু বখাটেদের দিয়ে আকরাম আলীর মেয়ে রাকিয়াকে উত্ত্যক্ত করাতেন। গতকাল নান্টু নিজেই তাকে গালিগালাজ করেন। আকরাম এ বিষয়ে নান্টুর মা-বাবার কাছে নালিশ করেন। পরে রাত ১০টার দিকে নান্টু ও তাঁর সহযোগীরা নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম ও তাঁর ছেলে হাসান ইমামের ওপর হামলা করেন। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন আকরাম। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে তিনি সেখানে মারা যান।

মানববন্ধনে আকরামের চাচাতো ভাই মো. ইসলাম বলেন, নান্টুসহ যারা এই হামলা করেছে, তারা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। একটি তুচ্ছ ঘটনায় আকরামের ছেলেমেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। গতকাল মেয়েটাকে নান্টু গালিগালাজ করেছে। আর তার প্রতিবাদ করায় আকরামকে হত্যা করা হয়। তারা এলাকার সবাই নান্টুসহ অন্যদের ফাঁসি চান। তারা যেন জামিনেও মুক্ত না হতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

আকরামের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি চাই, ওদের ফাঁসি হোক। ওরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে।’

আকরামের মেয়ে রাকিয়া আলফির ১০ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। নিহত আকরাম আলীর মেয়ে রাকিয়া আলফি রাজশাহী শিরোইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। সে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

বাবার লাশের সামনে দাঁড়িয়ে রাকিয়া বলে, ‘গতকাল আমি প্রাইভেট পড়া শেষ করে অটোরিকশা থেকে নামি। পরে নান্টু ও তার সহযোগীরা আমাকে গালি দেয়। আমি কিছু না বলে বাসায় গিয়ে বলি। পরে বাবা প্রতিবাদ করতে যান। তবে নান্টুর বাবা–মা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেলেকে লেলিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

রাকিয়া আরও বলে, ‘আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাবাকে হারিয়েছি। ওরা বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি বাপকে হারিয়েছি। এটার দুঃখ ভোলার মতো না। আমি ফাঁসি চাই।’

নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলা হয়েছে। তাঁরা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন।

 আরও পড়ুন

উত্ত্যক্তকারীর হাতে বাবার প্রাণ গেল, লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মেয়ে

বিস্তারিত পড়ুন