নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | কোলাজ

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আবারো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে নানা কর্মসূচির সঙ্গে আছে হরতালের ঘোষণাও। এর আগেও এমন কর্মসূচি ঘোষণা করে পালন করতে পারেনি দলটি। নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। গণহত্যার বিচার হওয়া এবং দলটি গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার আগে তাদের কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। এমন কোনো কিছু করার চেষ্টা করলে দেশের জনগণই তাদের প্রতিহত করবে। ওদিকে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কর্মসূচি ঘোষণার পর বিএনপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, গণহত্যাকারীদের বিচার হওয়ার আগে তাদের রাজনীতি করতে দেয়ার সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক পেজে আওয়ামী লীগের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করবে দলটি। ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়।

৫ই আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে দলটির কোনো সক্রিয় কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়নি। দলের প্রধান নেতা-কর্মীর বেশির ভাগই দেশের বাইরে আছেন, কেউ পলাতক রয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন নেতা একাধিক মামলায় আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন। গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি হত্যা, গণহত্যা, গুম ও নির্যাতনসহ অনেক মামলা করা হয়েছে। চলমান মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তার প্রত্যর্পণের জন্য গত ২৩শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। এমন অবস্থায় দলটির কর্মসূচি পালন দুরূহ বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে গত ১০ই নভেম্বর রাস্তায় নামার ঘোষণা দিলেও দলটির কাউকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষিদ্ধ এই সংগঠনও ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে।  

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম  বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যত দিন না ক্ষমা চাচ্ছে, যত দিন না তাদের নেতৃত্বকে বিচারের মধ্যে আনা হচ্ছে এবং যত দিন না জবাবদিহির মধ্যে আসছে, তত দিন তাদের কোনো প্রোটেস্ট (প্রতিবাদ কর্মসূচি) করতে দেয়া হবে না।

বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ নিয়ে সরকারের এ অবস্থানের কথা জানান শফিকুল আলম। এর আগে এদিন সকালে নিজের ফেসবুকে এক পোস্টেও এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বসহ অনেকেই পুরো জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গতকাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে, শেখ হাসিনা নিজেই গুম ও হত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। এত বড় একটি হত্যাকাণ্ড হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে, চোখের সামনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করা হলো, শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তাতে তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তারা আরও মিথ্যা কথা বলছে যে, তিন হাজার পুলিশ মারা গেছে। কত বড় মিথ্যাচার!

ওদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ঘোষণা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, এতগুলো মানুষ হত্যা করার পর এটা অনুশোচনাহীন এক নারীর আর্তচিৎকার ছাড়া কিছুই নয়। জুলাই আন্দোলনে শহীদ আহনাফের বাসায় বুধবার বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আহনাফকে হত্যা করেছে। পুরস্কারের লোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই কাজ করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। সে দেশে ফিরে আসতে পারলে মানচিত্র আর থাকবে না।

জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান সংগঠক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলে উইল্‌স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক একটি প্রদর্শনী পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি বলেন, এত মানুষ হত্যা করার পরও শেখ হাসিনা কীভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করেন? যে দেশে এত হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, সেখানে আসলে শেখ হাসিনাকে তো ফাঁসির মঞ্চে ঝুলতে হবে।