বেড়া উপজেলা পরিষদ: ৩৩ লাখ টাকা আয়কর বকেয়া রেখে নির্বাচনে ডেপুটি স্পিকারের ভাই

আবদুল বাতেন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি পাবনা: পাবনার বেড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী আবদুল বাতেনের প্রায় ৩৩ লাখ টাকা আয়কর বকেয়া রয়েছে। প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের আগে এ বিষয়ে আয়কর কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

প্রথম ধাপে ৮ মে বেড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। আবদুল বাতেনসহ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন নয়জন। তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাই এবং বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

এ ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই করা হয় ১৭ এপ্রিল। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থীর যোগ্যতা–অযোগ্য বিধিতে আয়কর বিষয়ে সনদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে আয়কর বকেয়া নিয়ে কিছু বলা নেই। আবদুল বাতেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাঁর সবশেষ কর প্রদানের সনদ জমা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়নি।’

আয়কর সার্কেল-১১ (কাশিনাথপুর) কার্যালয় থেকে উপ-কর কমিশনার সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে উপজেলা নির্বাচনে মোট ১১ জন প্রার্থীর আয়করসংক্রান্ত তথ্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল বাতেনের ৩২ লাখ ৮২ হাজার ৩২১ টাকা আয়কর বকেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাইফুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের আয়করসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছিল। আমরা তথ্য দিয়েছি। আবদুল বাতেনের বকেয়া কর কয়েক বছর আগের। তাঁকে কর পরিশোধের জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তিনি এই করের টাকা কমাতে আপিল করেছেন।’ কর বকেয়া থাকতে তিনি (আবদুল বাতেন) আয়কর সনদ কীভাবে পেলেন, তা জানতে চাইলে সাইফুর রহমান বলেন, ‘সনদের সঙ্গে সঠিকভাবে কর পরিশোধের কোনো সংযোগ নেই। কেউ আয়কর রিটার্ন জমা দিলেই তিনি আয়কর সনদ পেয়ে যান। আবদুল বাতেন রিটার্ন জমা দিয়ে সনদ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সম্পদ ও আয় অনুযায়ী কর বকেয়া রয়েছে।’

তবে আয়কর বকেয়া নেই বলে দাবি করেছেন আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭৮ সাল থেকে আমি নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করছি। আমার প্রতিবছরের আয়কর সনদ রয়েছে। তবে কেউ আমার প্রার্থিতা বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র করে এমন অভিযোগ তুলতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি করছি।’

এদিকে বড় অঙ্কের আয়কর বকেয়া রেখে কীভাবে প্রার্থিতা বৈধ হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন আবদুল বাতেনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী আফজাল হোসেন বলেন, ‘যেখানে বাড়ির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে প্রার্থিতা বাতিল হয়, সেখানে এত টাকা আয়কর বকেয়া রেখে কীভাবে তিনি (আবদুল বাতেন) বৈধ প্রার্থী হলেন?’  

আরেক প্রার্থী রেজাউল হক বলেন, ‘প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তিনি এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। আইনের বিষয়টি তিনিই ভালো জানেন। তবে এত টাকা আয়কর বকেয়া থাকার পরেও প্রার্থীর বৈধতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। কোনো অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর প্রার্থিতা বৈধ করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি।’