গাজায় ইসরায়েলি হামলা: যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক হামাস

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী | ফাইল ছবি: এএফপি

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক প্রাণঘাতী হামলা সত্ত্বেও আজ শুক্রবার হামাসের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।

গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ঠিক করতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে ৭২ শতাংশই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কয়েক দফায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা মাঝেমধ্যে গতি পেয়েছে আবার মাঝেমধ্যে থমকে গেছে। তবে গতকাল হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, হামাসের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে শিগগিরই মিসরে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দাবি পূরণ করে, এমন কোনো চুক্তি হলে প্রতিনিধিদল তাতে সম্মতি জানাবে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সব কিছু হারিয়ে এক ফিলিস্তিনি নারীর আহাজারি | ছবি: এএফপি

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। বৃহস্পতিবার হানিয়া মধ্যস্থতাকারীদের বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বুধবার হামাস নেতা ওসামা হামদান বলেছিলেন, আপাতত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিষয়ে তাঁদের সংগঠনের অবস্থান ‘নেতিবাচক’।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়ার পর হামাসের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে ইসরায়েল। দেশটির একজন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রকাশ করা বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরিতির এ প্রস্তাবে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে সম্ভাব্য কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রেখেছেন মধ্যস্থতাকারীরা।

হামাসের পক্ষ থেকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধ বন্ধ করে ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবিও জানানো হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক, তিনি রাফায় সেনা অভিযান পরিচালনা করবেন।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ফিলিস্তিনের রাফায় ১৩ লাখের বেশি আশ্রয়হীন মানুষ এখন ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানে স্থল অভিযান চালানো হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

গাজার নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা বলেছে, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার মরদেহ থাকায় রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে | ছবি: এএফপি

এদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনার মধ্যেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ হাজার ৬২২ জন নিহত হলেন।

গাজায় হামাস সদস্যদের কুচকাওয়াজ | ফাইল ছবি: রয়টার্স
 
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, রাফায় ইসরায়েল বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। আজ সেখানে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত এক পরিবারের ছয়জন নিহত হয়েছেন। রাফার বাসিন্দা বাসাম আল-হাফি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। এখন দুই পক্ষকেই যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেওয়া উচিত।

এখন পর্যন্ত হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গত নভেম্বরে কেবল একবার এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছিল। এতে ২৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে ৮০ জন জিম্মিকে মুক্ত করে হামাস। ইসরায়েলের ধারণা, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস হামলা করে যাঁদের জিম্মি করে, তাঁদের মধ্যে এখনো ১২৯ জন তাদের হাতে রয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্ত করতে নিয়মিত বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় করেছে পুলিশ।