নিজের মধ্যে সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদের এই কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। পরে বিজিবি ওই কার্যালয় পরিদর্শন করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: নাটোরের নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরে বড়গাছা এলাকায় কলেজ চত্বর ও এর আশপাশ এলাকায় এই সংঘর্ষ ঘটে।

নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে জেলা ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ওমর ফারুককে সভাপতি ও রবিন হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়টি জানাজানি হলে পদবঞ্চিত আজমাইন সাদ ও অনিক হোসেন ক্ষুব্ধ হন। তাঁদের পক্ষটি মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নবগঠিত কমিটির নেতা ও তাঁদের অনুসারীদের সঙ্গে কলেজ এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নবগঠিত কমিটির নেতারা তাঁদের সমর্থকদের নিয়ে কলেজ চত্বরে এলে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা তাঁদের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু করেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে নতুন নেতারা কলেজ ত্যাগ করে শহরের প্রধান সড়কে এলে আবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। তাঁদের নাম জানা যায়নি।

এ সময় কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে লুকিয়ে থাকেন। খবর পেয়ে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, এক প্লাটুন বিজিবি ও সদর থানার ওসিসহ পুলিশের একটি দল কলেজ চত্বরে এলে দুই পক্ষই গা ঢাকা দেয়।

বেলা একটার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি কলেজ চত্বর থেকে শহরে ফিরছিল। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজের নেতৃত্বে কলেজ শাখার নতুন দুই নেতা ও প্রায় ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী উত্তর বড়গাছা এলাকায় যান। তাঁরা সেখানে নাটোর-রাজশাহী সড়কের পাশে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদের কার্যালয় ও বাড়িতে অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। হামলাকারীরা ওই কার্যালয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। ইশতিয়াকের বাসার ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা দ্রুত মিছিল করে চলে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভাঙচুর চালানো ওই কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

ছাত্রলীগের সভাপতি পদবঞ্চিত আজমাইন সাদ (মাঝে) নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদের কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঘটনার পরপরই সভাপতি পদবঞ্চিত আজমাইন সাদ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, নতুন কমিটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না। যাঁদের কমিটিতে আনা হয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ ছাত্রদল করতেন। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে বিবাহিত, ছাত্রী উত্ত্যক্তকারী রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ কমিটি বাতিল করা না হলে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। যাঁরা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করেন, তাঁদের হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব মানায় না।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। পদবঞ্চিত হওয়ায় কেউ কেউ মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির কার্যালয়ে যাইনি। পদবঞ্চিতদের দুটি পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ায় এক পক্ষ কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে এবং ছবি তছনছ করেছে।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিস্থিতি শান্ত আছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।