রাজশাহীতে আবৃত্তি উৎসব

মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খায়রুজ্জামান লিটন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 
 
রাজশাহী প্রতিনিধি: দেয়ালে নোনা ধরেছে। বৃষ্টির পানি জমেছে মেঝেতে। ভাঙাচোরা মঞ্চ। ম্লান আলো। ভ্যাপসা গরম। এরই মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে একদল ছেলেমেয়ে সমস্বরে বলছেন, ‘আমাদের আছে অনেক কমলা রঙের রোদ্দুর।’ এবার এটিই তাঁদের উৎসবের স্লোগান। রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ ৩৪ বছরে পা দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে  শুক্রবার দুই দিনব্যাপী উৎসব শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটায় প্রদীপ প্রজ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

বৃহস্পতিবার উৎসবের প্রস্তুতি চলছিল। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মনিরা রহমান ঢাকা থেকে এসেছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ সংগঠনের কার্যালয়ে উৎসবের সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখছেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে এসেছেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ, রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদের সদস্য তথাপি আজাদ। সবার ব্যস্ততা এই উৎসব সফল করা নিয়ে। 

বক্তব্য দেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

তিন দশকের বেশি সময় সক্রিয় রয়েছে রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ। নগরের খানসামার চক এলাকায় রাজশাহী সংস্কৃতি সংঘের ভাড়াঘরে চলছে এর কার্যক্রম। প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় সাপ্তাহিক বৈঠক বসে। সংগঠনটি আবৃত্তিবিষয়ক নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। এটি দেশব্যাপী আবৃত্তি সংগঠনগুলোর ফোরাম বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সদস্য।

রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ উদ্যোগে ‘সুন্দরের কাছে যেতে...’ শিরোনামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে যারা অংশ নেয়, তারা সবাই শিশু। শহরের স্কুল পর্যায়ের শিশুরা এই শুদ্ধ উচ্চারণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে। এই সংগঠনের প্রযোজিত শিশু বিভাগের উল্লেখযোগ্য শ্রুতি নাটক হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের পুতুলের বিয়ে, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ভূতের জাদু, ঘোড়ার ডিম, গুরু শিষ্য, পান্তা বুড়ি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জুতা আবিষ্কার।

১৯৮৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকাল। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা হলেন কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ মুশতাক আলী, গীতিকার রম্যলেখক প্রয়াত আনোয়ারুল আবেদীন, চিকিৎসক সোহরাব হোসেন, শামস ইবনে ওবায়েদ, আলী ঝুনু ও ফেরদৌস খান।

সংগঠনের প্রথম সভাপতি ছিলেন সোহরাব হোসেন। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনিরা রহমান। বর্তমান সভাপতি জয়দীপ ভাদুড়ী ও সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

শরীফ আহমেদ জানান, প্রথম দিকে রাজশাহীতে এই সংগঠন দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা আবৃত্তির রেওয়াজ চালু করেছিল। ২০০৫ সালের পর থেকে সেটা আর করা সম্ভব হয়নি।

এবার উৎসবে সম্মাননা পাচ্ছেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক এবং নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদের প্রথম দিকের সদস্য আরমান পারভেজ।

আবৃত্তি পরিষদের সকলের সঙ্গে ছবি তোলেন অতিথিরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন