প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। এর  প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি চক্র ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করে যেকোনো মূল্যে হিন্দু নারীর অধিকার প্রতিহত করতে চাইছে। কিন্তু কারও অধিকার হরণের দাবি কখনোই গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ময়না তালুকদার। তিনি বলেন, ‘সংগঠনের যাত্রা শুরুর পর থেকে আমরা বৈষম্যমূলক হিন্দু আইনের ভুক্তভোগী এবং সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছ থেকে সমর্থন ও ভালোবাসা পাচ্ছি। তবে হিন্দু সমাজে গজিয়ে ওঠা মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল ও কায়েমি স্বার্থবাদী একটি মহলের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছি।’
গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের মনে ভয় ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও নারীদের নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অনলাইনে উত্ত্যক্ত করা, অশ্লীল গালাগাল, মিথ্যা প্রচারণা, কুৎসা রটনা এবং ধর্মীয় ও বংশ পরিচয় তুলে অভব্য (অসভ্য) মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, সংগঠনের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নন এমন কয়েকজন নারীর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কদর্য কথাবার্তা ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়েছে। তাঁদের ছবি ফটোশপ করে অশ্লীল প্রচারণা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, দুষ্টচক্রটি হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের অধিকার প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে অবৈধ ও বেআইনি কর্মসূচি পালন করছে।

আইনি ব্যবস্থা নিতে  সরকার, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কাছে দাবি জানানো হয়।

পার্শ্ববর্তী হিন্দুপ্রধান দেশগুলোর হিন্দু আইনের বিষয়টি উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ভারত, নেপাল এবং মরিশাসের হিন্দু আইনে লিঙ্গবৈষম্য না থাকলেও বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনে নারী, প্রতিবন্ধী, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি (নারী-পুরুষ উভয়ে) এবং লিঙ্গ–বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের প্রতি নির্মম বৈষম্য হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক, সহসভাপতি সুভাষ সাহা, পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ভানু লাল দাস এবং সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ পুলক রাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া প্রচলিত হিন্দু আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রের কাছে সংগঠনটির ছয়টি দাবিগুলো আবারও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে নারী, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গ–বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে সম্পত্তির সমান অধিকার, স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পুরুষের বহুবিবাহের সুযোগ বাতিল, বিশেষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের বিধান করা, সন্তানের ওপর পুরুষের মতো নারীরও অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি, নারীদেরও সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার এবং কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার প্রদান এবং বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে।